চ্যাট জিপিটির ব্যবহার : 2023 সালে চ্যাট জিপিটি কাজে লাগিয়ে ব্যবসায় হয়ে উঠুন Most Successful

আধুনিক প্রযুক্তির এক অসাধারণ আবিষ্কার হলো চ্যাট জিপিটি, যার মাধ্যমে একদম মানুষের অনুরূপ টেক্সট জেনারেট করা যায়। ২০২২ এর নভেম্বরে এটি উন্মুক্ত করে দেয়ার পর থেকেই সবার আলোচনা সমালোচনার মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই চ্যাটবটটি। বলা যেতে পারে, চ্যাট জিপিটির ব্যবহার নিয়ে সবার বেশ আগ্রহ রয়েছে। বিশেষ করে যাদের নিজেদের ই-কমার্স বিজনেস রয়েছে, তারা জানতে চাইছেন চ্যাট জিপিটির ব্যবহার তাদেরকে বিজনেসে সাকসেস এনে দিতে সক্ষম কিনা। 

 

সত্যি বলতে ই-কমার্স বিজনেসে চ্যাট জিপিটির এমন কিছু ব্যবহার রয়েছে, যেগুলো বিজনেসের অনেক কঠিন ও সময় সাপেক্ষ কাজকে সহজ করে তুলতে পারে, একই সাথে বিজনেসের সাকসেস পাওয়ার কাজটিও তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ করে তুলতে পারে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক ই-কমার্স বিজনেস সেক্টরে চ্যাট জিপিটির ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত।

 

১। চ্যাট জিপিটির ব্যবহার: ই কমার্স বিজনেসের সোশ্যাল মিডিয়া পেইজের জন্য অ্যাট্রাক্টিভ ক্যাপশন লিখতে

এখনকার সময়ে প্রতিটি ই-কমার্স বিজনেসেরই নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া পেজ থাকে। ওয়েবসাইট কিংবা এ্যাপ তো রয়েছেই, পাশাপাশি সব ই কমার্স ব্র্যান্ডই এখন ট্রাই করে যেন ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামের মতো জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টগুলোতে তারা নিয়মিত একটিভ থাকতে পারে। 

 

এখন এই কম্পিটিটিভ যুগে সোশ্যাল মিডিয়াতে যদি একটি ব্র্যান্ড তার নিজের প্রেজেন্স বাড়াতে চায়, তাহলে সেই ব্রান্ডের ছবি ও পোস্টে অ্যাট্রাক্টিভ একটি ক্যাপশন কিন্তু রাখতেই হয়। এই ক্যাপশন লেখার কাজটি মাঝেমধ্যেই অনেক কঠিন মনে হয়। আবার কাজটি কিছুটা সময় সাপেক্ষও বটে। 

 

তাই যেসব ই-কমার্স বিজনেস ওউনার পেইজের ক্যাপশন লেখার কাজকে আরেকটু সহজ করে তুলতে চান তারা চ্যাট জিপিটির হেল্প নিতে পারেন। 

 

যদি চ্যাট জিপিটিকে সঠিকভাবে ইন্সট্রাকশন দিতে পারেন, তাহলে দেখতে পাবেন মুহূর্তের মধ্যেই এটিতে অ্যাট্রেক্টিভ এবং কাস্টমারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে এমন ক্যাপশন জেনারেট হয়ে গেছে। তবে হ্যাঁ, এক্ষেত্রে যখন চ্যাট জিপিটিকে ইন্সট্রাকশন দিচ্ছেন, তখন যতটুকু সম্ভব স্পেসিফিক ইনস্ট্রাকশন দিতে হবে। যেমন কেন পোস্ট দিচ্ছেন , পোস্টটি ছোট হবে নাকি বড় হবে, পোস্টের টোন ফানি হবে নাকি সিরিয়াস হবে, টার্গেট অডিয়েন্স কারা ইত্যাদি। কেবলমাত্র তাহলেই মনের মতো ক্যাপশন জেনারেট হবে।

 

২। চ্যাট জিপিটির ব্যবহার: পারফেক্ট এসইঅ অপটিমাইজড প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন লেখা

যারা ই-কমার্স বিজনেস করেন, তারা নিশ্চয়ই জানেন একজন কাস্টমারকে প্রোডাক্ট কিনতে ইনফ্লুয়েন্স করার জন্য পারফেক্ট প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশনের গুরুত্ব কতটুকু। আবার প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন লেখার ক্ষেত্রে সার্চ ইঞ্জিন ফ্রেন্ডলি করে লেখারও একটি ব্যাপার থাকে। যেহেতু চ্যাট জিপিটির রাইটিং স্কিল অনেক ভালো, তাই নিজের ই-কমার্স বিজনেসের জন্য প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন লিখতে এটির সাহায্য কিন্তু নিতেই পারেন। 

 

চ্যাট জিপিটি ব্যবহার করে প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন লেখার জন্য চ্যাট জিপিটির টেক্সটবক্সে আপনাকে অবশ্যই প্রোডাক্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো প্রোভাইড করতে হবে। একইসাথে লেখাটিকে সার্চ ইঞ্জিন ফ্রেন্ডলি করার জন্য কিছু ইনস্ট্রাকশনও দিয়ে দিতে হবে। 

 

যেমন: প্রতিটি প্যারাগ্রাফের দৈর্ঘ্য কতটুকু হবে, প্রতিটি বাক্যতে কতগুলো শব্দ থাকবে, প্রোডাক্টের ঠিক কোন বিষয়টুকুতে ফোকাস থাকবে -অর্থাৎ প্রোডাক্ট সম্পর্কে বেসিক তথ্য নাকি প্রোডাক্টের উপকারিতা কোনটি ফোকাসড হবে, প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন একটিভ নাকি প্যাসিভ ভয়েসে হবে এবং সবশেষে প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশনেরর টার্গেট অডিয়েন্স কারা ইত্যাদি ইনস্ট্রাকশন দেয়া একদম মাস্ট । যদি এভাবে ডিটেইলে ইনস্ট্রাকশন দিতে পারেন তাহলে চ্যাট জিপিটি একদম অল্প সময়ে আপনাদেরকে পারফেক্ট প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন জেনারেট করে দিতে পারবে।

 ই-কমার্স বিজনেস সেক্টরে চ্যাট জিপিটির ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত।

৩। চ্যাট জিপিটির ব্যবহার: ই-কমার্স বিজনেসের কাস্টমার সার্ভিস উন্নত করতে

বলুন তো প্রতিটি বিজনেসে সাফল্য আনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ কারা? অবশ্যই কাস্টমাররা। যদি কাস্টমারদেরকে ভালোমতো সার্ভিস দিতে না পারেন, তাহলে আপনার বিজনেসে কখনোই আশানুরূপভাবে সেল আসবে না। ই-কমার্স বিজনেসের কাস্টমার সার্ভিসের কাজগুলো করার জন্য চ্যাট জিপিটি খুবই ইফেক্টিভ। 

 

কেন জানেন? কারণ চ্যাট জিপিটি একটি ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং মডেল হওয়ায় ক্রেতাদের বিভিন্ন রকম প্রশ্নের ঠিক উত্তর দিতে এটি খুব ভালো কাজ করে। একই সাথে চ্যাট জিপিটি কাস্টমার সার্ভিসে ব্যবহার করার আরেকটি সুবিধা হচ্ছে এই চ্যাট বটটি দ্রুততম সময়ে অনেকগুলো কাস্টমারের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে।

 

৪। চ্যাট জিপিটির ব্যবহার: এমপ্লয়ীদের প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে

আপনারা যদি নিজেদের ই-কমার্স বিজনেসে চ্যাট জিপিটি ব্যবহার করেন, তাহলে দেখতে পাবেন অনেক সময়সাপেক্ষ কাজই এই চ্যাট জিপিটি করে দিতে পারবে, যেগুলো যদি আপনার বিজনেসের এমপ্লয়ীরা নিজের হাতে করতেন ,তাহলে তাদের প্রোডাক্টিভিটি ধীরে ধীরে কমে যেত। 

 

অর্থাৎ বিজনেসের এমপ্লয়ীদের প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে চ্যাট জিপিটি দারুন কাজে আসে। যেমন: চ্যাট জিপিটি ব্যবহার করে আপনি বিজনেস রিপোর্ট তৈরি করতে পারবেন, পারফরম্যান্স ইভালুয়েট করতে পারবেন, ওয়েব রিসার্চ করতে পারবেন, লেখা অনুবাদ করতে পারবেন, ডাটা এনালাইসিস করতে পারবেন , আবার একই সাথে প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট লেখার কাজগুলোও কিন্তু এই চ্যাটবটটি করে দিতে পারবে। 

 

এর ফলে আপনাদের মূল্যবান সময় অনেকখানি বেঁচে যাবে, একই সাথে দেখতে পাবেন এই বাড়তি সময়টুকু আপনারা আপনাদের ই-কমার্স বিজনেসের মার্কেটিং স্ট্রাটেজি, প্রোডাক্ট ও সার্ভিস  ডেভেলপ করতে কাজে লাগাতে পারবেন। যা বিজনেসের সাকসেস বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করবে বহুগুণ।

Read More
চ্যাট জিপিটি কি? চ্যাট জিপিটির সুবিধা : Most Hyped Chatbot ChatGPT 2023

 

৫। চ্যাট জিপিটির ব্যবহার: লিড জেনারেট করতে

চ্যাট জিপিটি দিয়ে তৈরি চ্যাটবট কিন্তু ই-কমার্স বিজনেসের লীড জেনারেট করতে খুবই শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। কারণ এই চ্যাট বটের রেসপন্স গুলো খুবই ন্যাচারাল এবং একেবারে মানুষের মতো হয়ে থাকে। যদি আপনারা এই চ্যাটবট ব্যবহার করেন ,তাহলে এর সাহায্যে আপনারা পটেনশিয়াল কাস্টমারদের সাথে কমিউনিকেট করতে পারবেন। এর ফলে লাভ কি হবে জানেন? আপনারা আপনাদের পটেনশিয়াল কাস্টমারদের সঠিক চাহিদা কিংবা প্রয়োজন বুঝতে পারবেন, এরপর সে চাহিদা অনুযায়ী তাদের যে প্রোডাক্ট বা সার্ভিসগুলো পারচেজ করা প্রয়োজন সেগুলোই তাদেরকে সাজেস্ট করতে পারবেন , যা লিড কনভারশন পার্সেন্টেজ বাড়িয়ে তুলবে অনেকগুণ।

 

৭। চ্যাট জিপিটির ব্যবহার: ইমেইল মার্কেটিং করতে

বর্তমান সময়ে ই-কমার্স বিজনেসের প্রোডাক্টের সেল বাড়ানোর জন্য যে মার্কেটিং মেথডগুলো রয়েছে সেগুলোর মধ্যে ইমেইল মার্কেটিং অন্যতম। আপনারা কি জানেন চ্যাট জিপিটি ব্যবহার করে ইমেইল মার্কেটিংও করা যায়? 

 

যারা জানেননা তাদেরকে বলছি, আপনারা চ্যাট জিপিটি ব্যবহার করে পটেনশিয়াল কাস্টমারদের জন্য নিজের বিজনেসের প্রোডাক্টের ইনফরমেশন ব্যবহার করে পার্সোনালাইজড ইমেইল লিখে তাদেরকে সেন্ড করতে পারবেন। পার্সোনালাইজেশনের সুযোগ থাকায় এই ইমেইল গুলো যখন আপনার পটেনশিয়াল কাস্টমার দেখবেন,  তখন তারা আপনার কাছ থেকে প্রোডাক্ট পারচেজ করতে অবশ্যই ইন্টারেস্টেড হবেন। যা সেল বাড়াতে নি:সন্দেহে সহায়তা করবে।

 

৮। চ্যাট জিপিটির ব্যবহার: স্প্রেডশীট ফর্মুলা জেনারেট করতে

আপনারা যদি আপনাদের ই-কমার্স বিজনেসের জন্য প্রোডাক্ট ইমপোর্ট স্প্রেডশিট তৈরি করতে চান, তাহলে এই কাজটি দ্রুত করে দিতে চ্যাট জিপিটি ব্যবহার করতে পারেন। তবে এই কাজটি করার জন্য আপনাদেরকে সময় নিয়ে চ্যাট জিপিটিকে আগে ইনস্ট্রাকশন দিতে হবে।

 

পরিশেষে,

এটুকুই ছিল ই-কমার্স বিজনেসে চ্যাট জিপিটির ব্যবহার নিয়ে আজকের আলোচনা। আমি আশা করি আপনারা বুঝতে পারছেন এখনকার সময়ে ই-কমার্স বিজনেসের কাজগুলো সহজ করে তুলতে চ্যাট জিপিটি কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই নিজের ই-কমার্স ব্যবসায় সফলতার পথ সুগম করার লক্ষ্যে চ্যাট জিপিটি চোখ বন্ধ করে ব্যবহার করতে পারেন।

 

আমাদের আগামী লেখায় থাকছে চ্যাট জিপিটির অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত। যদি আপনারা এই সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সাথেই থাকুন।

আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ঘুরে আসুন আমাদের ফেসবুক পেইজ থেকে!

Leave a Comment