ছাদ বাগান কি? ছাদ বাগান কিভাবে করবেন? ছাদ বাগানের কয়েকটি Super Effective টিপসঃ 2022

ছাদ বাগান নিয়ে সবার – বিশেষ করে যারা শহরভিত্তিক এলাকাগুলোতে বসবাস করেন, তাদের বেশ আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়৷ নিরাপদ খাদ্য চাহিদা মেটাতে এবং প্রকৃতির মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিতে শহুরে জীবনে নিজের একটি বাগান সবারই চাওয়া থাকে। আমরা অনেকেই বাড়ির আঙিনায় বা  ফাঁকা জায়গায়  বাগান করে থাকি। 

তবে যারা শহরে বাস করেন তারা বেশিরভাগই বাড়ির ছাদে বাগান তৈরি করার মাধ্যমে বিভিন্ন ফলমূল, শাকসবজি  সহ নানা ফুলের গাছ  চাষ থাকেন। স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং নিরাপদ সবজি প্রাপ্তির সুবিধা থাকার কারণে বর্তমানে শহরে বসবাসকারী বেশিরভাগ মানুষই ছাদ বাগান তৈরি করে অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন। এছাড়া বয়স্ক নর-নারী এমনকি স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এরকম ছাদ বাগান তৈরি করার মাধ্যমে সৃষ্টির আনন্দ ও গাছপালার প্রতি ভালবাসা বহিপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। কারণ একটি সুন্দর ছাদ বাগান যেমন দিতে পারে সুন্দর একটি পরিবেশ, তেমনি সারা বছর ধরে মেটাতে পারে পরিবারের  নিরাপদ ফলমূল এবং শাকসবজির  চাহিদা। 

 

আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে  আপনারা খুব সহজেই জানতে পারবেন ছাদ বাগান কি, ছাদ বাগান কিভাবে করতে হয় এবং ছাদ বাগান করার কিছু ইফেকটিভ টিপস সম্পর্কে। চলুন সবার প্রথমে জেনে নিই ছাদ বাগান কি তা সম্পর্কে।

ছাদ বাগান কি ?

ছাদ বাগান হলো এক ধরণের বাগান যা মূলত বাড়ির ছাদে করা হয়ে থাকে। ছাদের মধ্যে যেকোনো  উপযুক্ত স্থানে বিভিন্ন ধরনের টব, পট,ড্রামে,মাঁচা  বা মাটি দিয়ে জমির মত করে প্রস্তুত করে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগিয়ে চাষাবাদ করা হয় । সাধারণত চার থেকে পাঁচ কাঠা জমির উপরে নির্মিত বাড়ির ছাদে পরিকল্পিতভাবে ছাদ বাগান করা যায়।

শখের ছাদ বাগান কেন করবেন? 

শহরে যারা বাস করে তাদের বেশিরভাগেরই বাড়ির আশেপাশে ফাঁকা জায়গা  কম থাকে। এতে দেখা যায় শহরের  বাসিন্দারা দিনের ৯০% সময় ঘরে বা অফিসের ভেতরে কাটান। ফলে মানুষ প্রকৃতির সান্নিধ্য হীনতায় ভোগে। কর্মব্যস্ত দিনের শেষে বা সপ্তাহান্তে এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি অনুভব করার প্রয়োজন হয় যেটি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। 

আবার এখন শহরের মানুষের মধ্যে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস,অস্থিরতা ইত্যাদি রোগের  বিস্তার দিন দিন বেড়েই চলেছে। সবকিছু মিলে একটি ছাদ বাগান প্রতিটি বাড়িতেই থাকা প্রয়োজন। কারণ একটি ফুলে, ফলে গাছগাছালিতে পূর্ণ সাজানো বাগান আপনাকে যেমন শূন্য হতে কিছু গড়ে তোলার আনন্দ দেবে, তেমনি সবার জন্য দৃষ্টিনন্দন একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করবে। এখন অবশ্যই ভাবছেন যে কিভাবে তৈরি করবো একটি ছাদ বাগান এবং কিভাবে করবো এর পরিচর্যা। চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক সে বিষয়গুলো সম্পর্কে।

ছাদ বাগান করার পদ্ধতি

ছাদ বাগান করতে গেলে সব থেকে আগে যেটি প্রয়োজন সেটি হলো  খোলামেলা জায়গা। কারণ এতে সহজেই পর্যাপ্ত পরিমাণ সূর্যের আলো পৌঁছাতে পারে।  সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে কয়েকটি পদ্ধতিতে   ছাদ বাগান করা হয়ে থাকে। যেমন: 

কাঠ বা লোহার ফ্রেম কাজে লাগিয়ে এঁটে বেড তৈরি করে সেটির মাধ্যমে

এই পদ্ধতিতে প্রথমে পুরো ছাদ বা ছাদের অংশবিশেষ ব্যবহার করে আলাদা ফ্রেম করে সুন্দরভাবে ডিজাইন করে সেটিং করা যায়। ফ্রেম তৈরির ক্ষেত্রে কাঠ, লোহা, স্টিল, মোটা রাবার এসব ব্যবহার করা হয়। এখানে খেয়াল রাখতে হবে যেনো পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি থাকে। যদি পানি না থাকে তাহলে আলকাতরার প্রলেপ দিয়ে তার ওপর মোটা পলিথিন বিছিয়ে মাটি দিয়ে বেড প্রস্তুত করতে হবে।  

মাটির প্লেট তৈরি করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে সেটির  পুরুত্ব যেনো  ২ ফিট হয়। প্রস্তুত করার পর সেখানে অতিরিক্ত পানি এবং সার  প্রয়োজন হয়ে থাকে।  এগুলোর সুষ্ঠভাবে ব্যবস্থাপনা করে রাখতে হবে। প্রয়োজন অনুসারে পরিমাণমতো রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হবে।  এই পদ্ধতিতে বেড যেভাবেই তৈরি  করা হোক না কেনো সেখানের রোগবালাই ও পোকামাকড় আক্রমণ করে থাকে। এটি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য তিন থেকে চার বছর পর পুরো টব বা ড্রাম ভেঙ্গে নতুন করে তৈরি করতে হবে।

এ পদ্ধতিতে  ছাদ বাগান করার জন্য শুরুতেই মাটিকে 100 লি ফরমালডিহাইড  পানির সাথে মিশ্রিত করে শোধন করে নিতে হবে। ফরমালডিহাইড মিশ্রিত পানি মাটিতে ছিটিয়ে দিয়ে পুরো মাটিকে মোটা পলিথিন দিয়ে তিন থেকে চারদিন ঢেকে রাখতে হবে। পরবর্তীতে পলিথিন উঠিয়ে সূর্যের তাপে খুলে রাখতে হবে  কিছুদিন। এরপর ফরমালিনের গন্ধ শেষ হয়ে গেলেই মাটি ব্যবহারের উপযোগী হবে।

আশেপাশে থালা টব,ড্রাম কিংবা কনটেইনার ব্যবহার করার মাধ্যমে 

এই পদ্ধতি নির্বাচন করার পর পাত্রের তলায় কিছু পরিমাণ হওয়া যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে যাতে পানি নিষ্কাশন এবং অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়। এক্ষেত্রে অর্ধেক মাটি এবং অর্ধেক পচা জৈব সারের মিশ্রন করে মাটির তৈরি করতে হবে। এই পদ্ধতিতে শাকসবজি বা ফুলের জন্য পাত্র ছোটখাটো হলেও চলে। তবে ফলের ক্ষেত্রে ড্রাম বা পাত্র যত বড় হবে তত গাছের শিখর প্রকৃতিগতভাবে বেশি গভীরে যাবে। এতে ফলের গাছ মোটা ও মজবুত হবে।      

গাছের ধরন অনুযায়ী পাত্র নির্বাচন করতে হবে। এরপর গাছের জাত নির্বাচন করে সুনির্দিষ্ট উপায়ে যৌক্তিকভাবে  ছাদে সাজাতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে বড় গাছ পূর্ব দক্ষিণ পাশে না দিয়ে পশ্চিম উত্তর পাশে  রোপন  করতে হবে। এতে ছাদে থাকা প্রতিটি গাছ পর্যাপ্ত পরিমাণে রোদ ভালো ভাবে পাবে। এছাড়া ছাদ বাগান করার ক্ষেত্রে ফল চাষাবাদে কলম ও হাইব্রিড জাতের চারা ব্যবহার করলে বেশি লাভবান হওয়া যায়।

বাঁশ, পিলার কিংবা রডের মাধ্যমে জাংলো বা মাচা বানানোর মাধ্যমে

এই পদ্ধতিতে টব বা প্লাস্টিকের পাত্রে ফুল, বাহারী গাছ-গাছালী, অর্কিড আবাদ করা হয়। এক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনা করে ঝুলন্ত টব কিংবা পাত্র মাঝখানে না ঝুলিয়ে পাশে ডিজাইন করে সেটিং করলে জায়গার যেমন সদ্ব্যবহার  হয় তেমনি দেখতেও সুন্দর লাগে।

এভাবে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ছাদ বাগান করা যেতে পারে।  পাশাপাশি যেসব পাত্রে গাছের চারা রোপন করে চাষ করা হবে সেসব পাত্রে চাষের পদ্ধতি ও পরিচর্যা ধরন জেনে নিতে হবে।  এখন আমরা জানবো ছাদ বাগান এ কোন ধরনের গাছ   রোপনের মাধ্যমে খুব অল্প সময়ে ভালো লাভবান হওয়া যায়।

ছাদ বাগানে  গাছ নির্বাচন

সাধারণত জমিতে যেভাবে চাষাবাদ করা যায় সেভাবে ছাদে চাষাবাদ করা সম্ভব হয় না। ছাদ বাগান এর ক্ষেত্রে গাছের জাত নির্বাচনে সতর্ক এবং সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরী।  তুলনামূলকভাবে সাধারণ জমিতে যে ধরনের সেবা যত্ন ও বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করতে হয় তার থেকে কয়েকগুণ বেশি করতে হয় ছাদ বাগান এর ক্ষেত্রে ।

গাছ নির্বাচনের সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেনো ঝোপঝাড় বা বাঁশ টাইপের কোন বড় গাছ লাগানো না হয়।যেসব গাছ বেশি রোদ বা গরম সহ্য করতে পারে না এমন গাছে ছাদে বপন করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ছোট আকারের ও বেশি ফলনশীল হাইব্রিড জাতের ফল গাছ লাগানো যেতে পারে।যেমন : আম, পেয়ারা, আপেল কুল, জলপাই, করমচা, শরিফা, আতা, আমড়া, লেবু, ডালিম, পেঁপে এবং কলা।

ছাদ বাগান করতে টবে চাষের জন্য আমের মধ্যে আম্রপালি, আলফানসো, বেঁটে প্রজাতির বারোমেসে, লতা, ফিলিপাইনের সুপার সুইট, রাড়গুআই চাষ করা যেতে পারে। লেবুর মধ্যে কাগজি লেবু, কমলা, মালটা, নারকেলি লেবু, কামকোয়াট, ইরানি লেবু, বাতাবি লেবু টবে খুব ভালো হয়।

এসব চারা বিভিন্ন বিশ্বস্ত নার্সারি অথবা পরিচিত লোকজন বা বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারেন।আবার আপনি চাইলে বেঁটে প্রজাতির অতি দ্রুত বর্ধনশীল ফলের গাছ লাগাতে পারেন।  ছাদ বাগান এর ক্ষেত্রে সাধারণত বীজ চারার চেয়ে কলম চারা লাগালে বেশি ফল পাওয়া যায়। নার্সারিতে গেলেই আপনি গুটি কলম, চোখ কলম ও জোড়া কলম সংগ্রহ করে  চারা  লাগাতে পারেন। 

যেমনঃ জলপাই,  কদবেল, স্ট্রবেরি, আপেলকুল, লিচু, থাইল্যান্ডের লাল জামরুল,ডালিম, আপেল জামরুল, আঙুর, পেয়ারা, মিষ্টি জলপাই,  থাই পেয়ারা, ফলসা, বাউকুল, কামরাঙা ইত্যাদি। 

আজকাল বিদেশ থেকে উন্নত মানের কিছু চারা কলম দেশে আসছে।সঠিক মানের চারা হলে এক বছরের মধ্যেই ফল আসে। মাটির বেড অথবা মাচা করে ছাদ বাগানে বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মরিচ, শসা, লাউ, কুমড়া, ঢেঁড়স, বরবটি, সিম, ক্যাপসিকাম, লেটুসপাতা, পুদিনাপাতা, ধনেপাতাসহ প্রায় সব ধরনের সবজি টবে বা ড্রামে ফলানো সম্ভব।

টবের সার-মাটি

ছাদ বাগান করতে হলে দো-আঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটির ব্যবহার করলে গাছ ভাল জন্মে। এছাড়া  গাছের খাদ্য পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য মাটিতে দরকার বিভিন্ন সার মেশানো।  সার হিসেবে মাটিতে গোবর সার, কম্পোস্ট সার, পচা পাতা ও রাসায়নিক সার পরিমাণমতো মেশানো যেতে পারে। শুকনো দুর্বা ঘাস টবের মাটির মাঝামাঝি দিয়ে তার উপরে মাটি দিয়ে চারা গাছ লাগানো ভালো।

ছাদ বাগানের যত্ন ও পরিচর্যা

সফল ভাবে ছাদ বাগান গড়ে তোলার জন্য নিয়মিত পরিচর্যা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তবে ছাদে যেহেতু স্বল্প জায়গা থাকে, সেহেতু  সীমিত আকারে উৎপাদন করতে গেলে অতিরিক্ত সেবা, যত্ন এবং বিভিন্ন পরিচর্যার মাধ্যমে সর্তকতা অবলম্বন করতে হয়। সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্কতার অবলম্বন করা হয়ে থাকে কেননা সার প্রয়োগের পরিমাণ কম বা বেশি হলে অপুষ্টিতে ভুগে মারা যাবে।

ছাদ বাগান এর টব বা ড্রাম গুলোতে নিয়মিত ডিপিং করতে হয়। এর মাধ্যমে টব বা ড্রামে  থাকা মাটি পরিবর্তন করা হয়। এটি গাছের পুষ্টি গুনাগুন বৃদ্ধি হওয়ার প্রবণতা ভারসাম্য বজায় রাখে। এছাড়া বর্তমানে টবের মাটি কিনতে পাওয়া যায়।

আপনি  চাইলে মাটিগুলো কিনেও টবে ভরে ডিপিং করতে পারেন। এরপর যে বিষয়টি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হল টব,পট এবং ড্রামে চারা, কলম বা বীজ রোপন। ঠিক মাঝখানে পরিমাণমতো মাটির নিচে রোপণ করতে হবে।চারা এমনভাবে রাখতে হবে যেনো চারা বা কলমের সাথে লেগে থাকা মাটি  ভেঙে না যায়। ফলমূল ও শাকসবজি চাষের ক্ষেত্রে ছাদ বাগানকে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। এজন্য পুরাতন রোগাআক্রান্ত, বয়স্ক ডালপালা এবং পাতা সাবধানতার সাথে কেটে নির্দিষ্ট স্থানে জমা করতে হবে। 

এতে গাছ যেমন ভালো থাকবে তেমনি ভালো ফলন দিবে। নিয়মিত পরিমাণ মতো  জৈব রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে। ফলের ক্ষেত্রে বর্ষার আগে এবং পরে সার প্রয়োগ করা উত্তম।  সার প্রয়োগে খেয়াল রাখতে হবে মাটির আর্দ্রতা সম্পর্কে।আমাদের দেশের আবহাওয়ার ধরন অনুযায়ী যে কোন ফলমূল শাকসবজি নানা রকম পোকা মাকড়  উপদ্রব বেশি হয়ে থাকে। এজন্য নিয়মিত ২/৩ বার বাগান পরিদর্শন করা উচিৎ ।  

প্রতিটি গাছের কাছে গিয়ে নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে    নানা ধরনের পোকামাকড়ের আক্রমণ  সম্পর্কে সতর্ক থাকা যাবে। এতে মাস বা বছর শেষে  ফসল ভালো আসবে। কোন গাছ আক্রান্ত হলে যুক্ত বালাইনাশক সঠিক সময়ে ব্যবহার করলে   স্বল্প সময়ের মধ্যে   যেকোনো গাছ রোগ থেকে মুক্তি পাবে। এছাড়া ফলমূলের গাছে পাখিদের হাত থেকে রক্ষার জন্য নেটের জালি দিয়ে বেঁধে দিতে পারেন। এভাবে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলে সহজেই ছাদ বাগানে প্রতিটি গাছের পরিচর্যা করা সম্ভব হয়।

সেচ ও নিস্কাশন : 

গাছপালা ফলমূল-শাকসবজি যে কোনো কিছুরই চাষাবাদের পানি  অপরিহার্য বিষয়। ছাদ বাগান ভালো রাখতে বাগানে নিয়মিত পানি দিতে হয়। কেননা এই ধরনের বাগানের গাছগুলো সাধারণত মাটির সংস্পর্শে হতে দূরে থাকে। এতে নিয়মিত পানি না পেলে যেকোনো গাছ পানির অভাবে মারা যাবে। 

এজন্য প্রতিদিন সকাল  বিকাল বেলা প্রয়োজন অনুসারে পানি দিতে হবে। পানি দেওয়ার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে কোনো গাছে যেনো পানি জমে না থাকে। কারণ এতে গাছ পানিতে পঁচে মারা যাবে। ছাদ বাগানে গাছে পানি দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের ছোট  পাত্র   বা প্লাস্টিকের চিকন পাইপ পাওয়া যায়। এগুলোর ব্যবহারের মাধ্যমে খুব সহজেই নিয়মিত ছাদ বাগানের প্রতিটি গাছে পানি দিতে পারবেন।

বাগান তৈরীর মাধ্যমে আপনি যেভাবে লাভবান হবেন

ছাদ বাগান  বিষয়টি  সবারই এক প্রকার  ভালো লাগার জায়গা থেকে শখ হিসেবে গড়ে ওঠে। এজন্য বাসায় বসে থেকে একঘেয়েমি ভাব চলে আসে  তা  ছাদ  বাগানের মাধ্যমে সহজেই দ্রুত দূর করা সম্ভব। নিজেকে যখন ফুল, ফল ও শাকসবজি ও নানা বাহারি  গাছের মধ্যে বিলিয়ে দেবেন  তখনই অনুভব করবেন এক সাগর প্রশান্তির স্রোত। 

সারা বছর ধরে নানা ফুল, ফল এবং শাকসবজি আহরণ করার যেমন সুযোগ থাকছে, তেমনি সুযোগ থাকছে স্বল্প পরিসরে বাজারে বিক্রি করার। আর্থিকভাবেও বেশ লাভবান হওয়া সম্ভব। এভাবে বিভিন্ন ঋতুতে সুমিষ্ট স্বাস্থ্যকর ফল আহরণ এর মাধ্যমে  শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার মাধ্যমে ছাদ বাগান আমাদের জীবনের হতে পারে এক অপরিহার্য অংশ।

ছাদে বাগানের কিছু টিপস

ছাদ বাগান করতে গেলে কিছু ছোট বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। এখম কিছু টিপসের কথা বলবো যেগুলো অনুসরণ করলে খুব সহজেই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করা যায়। 

  • ছাদ বাগান করার সময় অবশ্যই লম্বা গাছগুলোকে ছোট গাছের পিছনে রাখবেন। এতে  ছোট গাছ গুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো পাবে।
  • টব বা ফ্রেমে খৈল দেওয়া যাবে না কারণ এতে পিঁপড়ার উপদ্রব বাড়তে পারে। 
  • বাজারে যেসব  প্যাকেটজাত কম্পোজ সার পাওয়া যায় তা নিয়ে সে ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো মানের দিক দিয়ে যথেষ্ট  ভালো।  
  • প্রতিবছর টবের মাটি পরিবর্তন করা ভালো যেটির উপযুক্ত সময় হল অক্টোবর মাস।
  • সার তৈরির প্রয়োজন হলে মিশ্র সার ব্যবহার করতে পারেন। এটির জন্য গুটি ইউরিয়া খইল হাড়ের গুড়া ইত্যাদি এসব পচিয়ে সহজেই  তৈরি করে নিতে পারেন। 
  • বর্তমানে বাজারে স্টিল লোহার ফ্রেম পাওয়া যায়। ছাদ বাগান করার জন্য তৈরি করা হয়েছে যার মাধ্যমে সহজে ছাদে গাছ স্থাপন করতে পারবেন।
  • গাছ লাগানোর পর গাছ খুঁটিতে অবশ্যই বেঁধে দিবেন। এতে ঝড়-বৃষ্টি যেটি হোক না কেন গাছ হেলে পরবেনা। 
  • গাছ গুলোতে যে ধরনের টপ ব্যবহার করবেন  তাতে ছিদ্র আছে কিনা সেটি অবশ্যই খেয়াল করে নিবেন। কেননা এতে অতিরিক্ত পানি জমে থাকতে পারে না। প্রয়োজনে টপ গুলোর ভেতরে পানি প্রতিরোধক করিয়ে নিতে পারেন এতে  অতিরিক্ত পানি জমে থাকে না। 
  • সূর্যের আলো এবং ঋতু অনুযায়ী গালস নির্বাচন করতে হবে। 
  • পাশাপাশি এককভাবে শুধু ফল কিংবা সবজির বাগান না করে সবকিছু সমন্বয়ে করলে বাগানটি বেশ সুন্দরভাবে গুছানো  হবে।

পরিশেষে,ছাদ বাগান বিষয়টি বর্তমানে এত জনপ্রিয় যে প্রতিটি মানুষই এ ধরনের  বাগান ও নিয়মিত পরিচর্যা করতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। দৈনিক কর্মব্যস্ততা ও কোলাহল জীবনের মাঝে মানুষ চায় মানসিক প্রশান্তি। তাই আপনিও যদি মনে মনে ভেবে থাকেন একটি ছাদ বাগান করার ব্যাপারে তাহলে আর দেরি না করে বাগান করার উদ্দেশ্যে কাজে লেগে পড়ুন। 

Leave a Comment