শিক্ষাজীবনে বেশিরভাগেরই ইচ্ছা থাকে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে টাকা ইনকামের। নিয়মিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস করতে হয় ও পরীক্ষা দিতে হয় বলে পার্ট টাইম কাজগুলোই সবাই বেশি প্রেফার করে। তাইতো আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের জানাবো ছোট ছোট কাজ করে আয় করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত। এই আর্টিকেলটি পুরোটুকু পড়লে শিক্ষার্থীরা বর্তমান সময়ে আয় করার মতো জনপ্রিয় কিছু কাজ সম্পর্কে ধারণা পাবেন, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই ইফেকটিভ আর্নিং সোর্স গড়ে তুলতে পারবেন।
ছোট ছোট কাজ করে আয় করার জনপ্রিয় কিছু মাধ্যম
আগেকার দিনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুধুমাত্র পড়াশোনা করার প্রবণতা থাকলেও এখন দিন বদলেছে। পড়াশোনার পাশাপাশি ছোট বয়স থেকেই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রবণতা এখন তাদের ভেতর লক্ষণীয়। তাই কিভাবে বিভিন্ন ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে আয় করা যেতে পারে এই প্রশ্নটি তাদের মাথার ভেতর ঘুরপাক খেতে থাকে।
অনেকেই মনে করেন ছোট ছোট কাজ করে আয় করা বলতে শুধুমাত্র অনলাইন আর্নিংকে বোঝানো হয়। আসলে ব্যাপারটি সেরকম নয়। শিক্ষার্থীরা চাইলে অনলাইন ও অফলাইন দু’ভাবে বিভিন্ন কাজ করে নিজেদের হাত খরচের টাকা যোগাড় করতে পারে। চলুন তাহলে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক।
১। ফ্রিল্যান্সিং
ছোট ছোট কাজ করে আয় করার উপায় গুলোর মধ্যে ফ্রিল্যান্সিং বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয়। দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে ফ্রিল্যান্স ভিত্তিক কাজের সুযোগ দেয় কয়েকটি ওয়েবসাইট হলো আপওয়ার্ক, ফাইভার ইত্যাদি। ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কনটেন্ট রাইটিং, ওয়েব ডিজাইন ,গ্রাফিকস ডিজাইন ইত্যাদি।
এই ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটগুলোতে অ্যাকাউন্ট খুলে দক্ষতা অনুযায়ী কাজের জন্য আবেদন করতে হয়। তারপর ক্লায়েন্টরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী যোগাযোগ করে ফ্রিল্যান্সারকে কাজ দেয়। এছাড়া দক্ষতা অনুযায়ী সার্ভিস ডেলিভারি ভালো হলে ক্লায়েন্টের সাথে লং টার্মের কাজ করার সুযোগ তৈরি করা যায় ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে।
ফ্রিল্যান্সিং সাইটের পাশাপাশি বর্তমানে ফেসবুক থেকেও শিক্ষার্থীরা ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ক্লায়েন্ট খুঁজে পেতে পারে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং গ্রুপে জয়েন করার মাধ্যমে ।
২। সার্ভে ও প্রোডাক্ট রিভিউ করা
বর্তমানে এমন অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলো প্রতিনিয়ত জরিপ করার সু্যোগ দেয় এবং সেখানে অংশ নিলে অর্থ আয় করা যায়। এর পাশাপাশি সাইটে বিভিন্ন পণ্যের রিভিউ লিখেও আয় করে থাকেন অনেকে। তবে এই সেক্টরগুলোতে কাজের সময় কোনটি আসল আর কোনটি স্ক্যাম তা যাচাই-বাছাই করে তারপরেই করতে হবে।
৩।ভার্চ্যুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট
যারা ঘরে বসে অফিস কালচারের অংশ হতে চান তারা বিভিন্ন কোম্পানি বা ক্লায়েন্টের ভার্চ্যুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করে টাকা আয় করতে পারেন। দেশি বিদেশি নানা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন, কাজের দক্ষতার ভিত্তিতে ভার্চ্যুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়োগ দেয়। ভার্চ্যুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে ব্লগ রাইটিং, গ্রাফিক ডিজাইনিং, টেকনিকাল সাপোর্ট, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট, ফোন কল, ই-মেইল,, ডেটা এন্ট্রি, এডিটিং, রাইটিং,ইন্টারনাল রিসার্চের মতো কাজ করার সু্যোগ থাকে। ইফেকটিভ আর্নিং সেক্টর হিসেবে ভার্চ্যুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়।
Read More
ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হয়ে আয় 2023: ঘরে বসেই প্রতিমাসে আয় করুন হাজার হাজার টাকা!
৪। সোশ্যাল মিডিয়ার পেজ মডারেটর
ছোট ছোট কাজ করে আয় করার উপায় হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডের সোশ্যাল মিডিয়ার পেজ মডারেটরের কাজ করতে পারেন। বর্তমানে দক্ষ সোশ্যাল মিডিয়া পেজ মডারেটরদের ডিমান্ড যেমন বেশি, তেমনি এই কাজের স্যালারিও বেশ ভালো। তবে এই কাজে দক্ষতার পাশাপাশি সৃজনশীলতার প্রয়োজন হয়। কারণ পেজ মডারেটরদের পেজের কন্টেন্ট ক্রিয়েটের কাজ করতে হয়।
৫। টিচিং
কোনো বিষয়ে যদি আপনার বাড়তি পারদর্শিতা থাকে, তবে অনলাইন এবং অফলাইন সে বিষয়ে সব বয়সী শিক্ষার্থীদের টিউটরিং করতে পারেন। বর্তমানে অনেক শিক্ষার্থী এই উপায়ে বেশ ভালো পরিমাণ টাকা আয় করছে।
৬। ডেটা এন্ট্রি
ছোট ছোট কাজ করে আয় করার উপায় গুলোর মধ্যে সব থেকে সহজ কাজগুলোর একটি হচ্ছে ডেটা এন্ট্রি। যাদের কম্পিউটার, ইন্টারনেট কানেকশন ও একইসাথে দ্রুতগতির টাইপিং দক্ষতা আছে, তারা এই সেক্টরে কাজ করতে পারেন পারেন ।
৭। প্রোডাক্ট বা ফুড ডেলিভারি এজেন্ট
যারা সাইকেল কিংবা বাইক চালাতে ভালোবাসেন, তারা ডেলিভারি এজেন্ট হিসেবে কাজ করেও অনেক টাকা ইনকাম করতে পারেন । বর্তমানে অনেক শিক্ষার্থীরা রাস্তায় চলাচলের জন্য সাইকেল বা বাইক ব্যবহার করেন। তারা বিভিন্ন কোম্পানির জন্য ফুল-টাইম, পার্ট-টাইম, এমনকি ফ্রিল্যান্স ভিত্তিতে ডেলিভারি এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারেন।
৮। অডিও শুনে লেখার মাধ্যমে
যাদের ভালো ইংরেজি বোঝেন, অডিও শুনে লেখা হতে পারে ছোট ছোট কাজ করে আয় করার দারুণ একটি উপায়। ক্লায়েন্টের দেয়া অডিও শুনে শুনে তা ওয়ার্ড ফাইলে লিখে বিনিময়ে আপনি টাকা উপার্জন করতে পারেন।
৯। গেমিং কম্পিটিশন
শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন, যারা অবসর সময়ে গেম খেলতে ভালোবাসেন। তাদের জন্য বর্তমানে বিভিন্ন অনলাইনে গেমের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়ে ভালো করে খেলে জিততে পারলে, আপনি জিতে নিতে পারবেন বিশাল অংকের প্রাইজ মানি।
১০। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
শিক্ষার্থীরা চাইলে ওয়েবপেজ, ব্লগ কিংবা নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সেবা বা পণ্যের লিংক যুক্ত করার মাধ্যমে আয় করতে পারে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নিয়ে কাজ করা প্রবণতা অনেক বেশি ।
১১। সিপিএ মার্কেটিং
সিপিএ মার্কেটিং বর্তমানে ছোট ছোট কাজ করে আয় করার উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি প্রায় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মতই । তবে এখানে পণ্য বিক্রি না করে লিংক শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে ওয়েবসাইটে ভিজিটর বাড়ানোর কাজ করে কমিশনের মাধ্যমে আয় হয় ।
১২। প্রোডাক্ট রিসেলিং
যেসব শিক্ষার্থী কম রিস্কে আয় করতে চায়, তাদের জন্য প্রোডাক্ট রিসেলিং হতে পারে পারফেক্ট চয়েস। এই কাজটিতে শিক্ষার্থীরা কোন বিজনেস থেকে তাদের প্রোডাক্ট প্রফিট রেখে নিজেদের মত করে সেল করতে পারে। এতে করে ব্যবসা করার জন্য মূলধন লাগে না, উপরন্তু টাকাও আয় করা যায়।
পরিশেষে,
এটুকুই ছিল শিক্ষার্থীদের জন্য ছোট ছোট কাজ করে আয় করার উপায় সম্পর্কিত আজকের আলোচনা। জীবনের চলার পথে সবারই অর্থের প্রয়োজন। তাই ছোট ছোট কাজ করে নিয়মিত আয় থাকা মানে অল্প আয় নয়, বরং এটি শিক্ষার্থীদের কম বয়স থেকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে বহুগুণে সহায়তা করে।
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ঘুরে আসুন আমাদের ফেসবুক পেইজ থেকে!