ফ্রিল্যান্সিং কি? নতুনরা কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন? Ultimate Freelancing Guideline 2022

আগেকার দিনে ক্যারিয়ার চয়েস হিসেবে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারই ছিল সবার পছন্দের ঊর্ধ্বে। কিন্তু এখন দিন বদলের অংশ হিসেবে প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে আমাদের নিত্যদিনের চলার পথের প্রতিটি ক্ষেত্রে। এরই রেশ ধরে মানুষের ক্যারিয়ার চয়েসের মধ্যেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। যদি উদাহরণ দিতে চাই, তাহলে বলতে হয় এখন অনেক মানুষই প্রতিদিন নয়টা থেকে পাঁচটা অফিসে বসে একঘেয়ে কাজ করার চাইতে যেকোনো জায়গায় বসে নিজের সুবিধাজনক সময়ে কাজ করতে চান। বলা যেতে পারে, মূলত একারণেই আমাদের এ প্রজন্মের মধ্যে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ার আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ শুধু তাই নয়, অনেকে এ সেক্টরে কাজ করে সাকসেসফুলও হচ্ছেন৷ তবে যারা বিগিনার, তারা যেমন ফ্রিল্যান্সিং কি সে সম্পর্কে জানেননা, একইসাথে তারা বুঝতে পারেননা যে ঠিক কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা যেতে পারে। তাই সবার কথা মাথায় রেখে আজকের এই লেখাটিতে আমি ফ্রিল্যান্সিং কি এবং একজন বিগিনার হিসেবে কিভাবে আপনি ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো। তাই সবাইকে পুরোটুকু মনোযোগ সহকারে পড়ে দেখার অনুরোধ রইলো। 

ফ্রিল্যান্সিং কি? 

ফ্রিল্যান্সিং করে কিভাবে সফল হওয়া যায় সেটি নিয়ে বর্তমানে অনেক লেখালেখি করা হলেও ফ্রিল্যান্সিং কি সেই ব্যাপারে নতুনরা ঠিক বুঝতে পারেননা। যদি সহজ বাংলায় বলি, ফ্রিল্যান্সিং হলো এমন একটি কাজ করার সেক্টর যেখানে অনলাইনে নিজের স্কিলকে কাজে লাগিয়ে এক বা একাধিক ক্লায়েন্টকে সার্ভিস দিয়ে টাকা আর্ন করা যায়। যারা ফ্রিল্যান্সিংয়ের সাথে যুক্ত, তাদেরকে ফ্রিল্যান্সার বলা হয়। কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশে এই পেশার অত জনপ্রিয়তা ছিলোনা। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, দেশে ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

এখন প্রশ্ন হলো, অনলাইনে কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করবেন | how to become a freelancer online?

এটির উত্তর হলো, অনলাইনে কয়েকটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলোতে নিজের প্রোফাইল ক্রিয়েট করার মাধ্যমে ক্লায়েন্টদের কাছে নিজের সার্ভিস সেল করা হয়। যেমনঃ ফ্রিল্যান্সার ডট কম, পিপল পার আওয়ার, ফাইভার, আপওয়ার্ক ইত্যাদি। তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ফাইভার এবং আপওয়ার্কই সবচাইতে জনপ্রিয় এবং এ দু’টি সাইটে কাজ করে বহু ফ্রিল্যান্সার সাকসেসের দেখা পেয়েছেন। 

ফ্রিল্যান্সিং কি সেটি তো জানলেন, এবার চলুন অন্যান্য পেশার সাথে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মূল পার্থক্য মূল পার্থক্য জেনে নেয়া যাক। ফ্রিল্যান্সিং অনলাইনভিত্তিক পেশা হওয়ায় এখানে প্রতিদিন অফিসে বসে নির্দিষ্ট সময় ধরে একনাগাড়ে বসে থেকে কাজ করার ঝক্কি থাকেনা। বরং একজন ফ্রিল্যান্সার বাড়িতে কিংবা তার ইচ্ছামতো যেকোনো স্থানে বসে নিজের সুবিধাজনক সময়ে কাজ করে ক্লায়েন্টদেরকে সেটি ডেলিভারি করেন। অনেকেই রয়েছেন যারা দিনের পুরোটা সময়ই ক্লায়েন্টদেরকে সার্ভিস দিতে ব্যয় করেন৷ আবার অনেকে দিনের মধ্যে কয়েক ঘণ্টা ফ্রিল্যান্সিংয়ের পেছনে ব্যয় করেন। অর্থাৎ এই ফিল্ডে ফ্লেক্সিবিলিটি অন্যান্য ক্যারিয়ার ফিল্ডের চাইতে তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি। 

ফ্রিল্যান্সিং করতে কি কি থাকা প্রয়োজন? 

ফ্রিল্যান্সিং এমন একটি ফিল্ড যেখানে বিভিন্ন সেক্টরে ক্লায়েন্টদেরকে সার্ভিস দেয়ার সুযোগ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সবচাইতে জনপ্রিয় কয়েকটি ফিল্ড হলো ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েবসাইট ডিজাইন, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা এসইও, ডাটা এন্ট্রি, কন্টেন্ট রাইটিং,গ্রাফিক ডিজাইন ইত্যাদি। একারণে ফ্রিল্যান্সার হতে চাইলে প্রথমেই যেকোনো একটি সেক্টরে নিজের স্কিল ডেভেলপ করতে হয়। একজন ফ্রিল্যান্সারের সবচাইতে বড় শক্তি হচ্ছে তার স্কিল। একারণে এই পেশায় আসতে চাইলে অন্তত যেকোনো একটি সেক্টরে দক্ষ হওয়া অত্যাবশ্যক। 

ফ্রিল্যান্সিং কি সে সম্পর্কে বলতে গিয়ে শুরুতেই বলেছি এটি অনলাইনের মাধ্যমে করা হয়। একারণে যারা ফ্রিল্যান্সিং করতে চান, তাদের শুরুতেই প্রয়োজন হবে একটি ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ এবং সেগুলোতে অবশ্যই ইন্টারনেট কানেকশন থাকতে হবে। অনেকেই জিজ্ঞেস করেন যে মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করা যায় কিনা। এটির উত্তর হচ্ছে না, মোবাইল বা স্মার্টফোন দিয়ে আপনি ফ্রিল্যান্সিংয়ের বেশিরভাগ কাজই করতে পারবেননা। তবে যদি লেখালেখি অর্থাৎ কন্টেন্ট রাইটিংয়ের সাথে যুক্ত থাকেন, তাহলে স্মার্টফোনে লেখালেখির কাজটুকু সেরে নিতে পারবেন। তবে আমি বলবো, স্মার্টফোনের চাইতে ল্যাপটপ কিংবা ডেস্কটপ ব্যবহার করাই ভালো। 

এছাড়াও ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে পেমেন্ট রিসিভ করার জন্য প্রয়োজন হবে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের যাতে করে দেশের বাইরের ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে পেমেন্ট রিসিভ করতে কোন অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয়।ফ্রিল্যান্সিং করতে চাইলে আরেকটি বিষয়ে দক্ষ হতে হয় যেটি নিয়ে কেউ সেভাবে কথা বলেনা। সেটি হলো নিজের বেসিক ইংলিশ স্কিল থাকা। যেহেতু এটি অনলাইনভিত্তিক উপার্জনের মাধ্যম, একারণে যেসব ক্লায়েন্টকে সার্ভিস দেয়া হয় তারা বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন। তাই তাদের সাথে কথা বলে তাদের চাহিদা বোঝার জন্য বেসিক ইংলিশ আপনাকে জানতেই হবে। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে খুব সহজেই আপনারা ইংলিশে দক্ষ হয়ে উঠতে পারবেন। 

ফ্রিল্যান্সিং কি

 

নতুনরা কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন? 

এখন আমি আপনাদের জানাবো নতুনরা কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারেন সে সম্পর্কে। ফ্রিল্যান্সার হতে চাইলে প্রথমেই যেকোনো একটি সেক্টরে নিজের স্কিল ডেভেলপ করতে হয়। সুতরাং ফ্রিল্যান্সিং কি সে সম্পর্কে জানার পর যদি আপনি এই ফিল্ডে আসতে চান তাহলে শুরুতেই যেকোনো একটি সেক্টরে নিজের স্কিল ডেভেলপ করতে হবে। 

এখন প্রশ্ন হলো কোন সেক্টরে নিজের স্কিল ডেভেলপ করবেন?

এক্ষেত্রে দু’টি বিষয় মাথায় রাখবেন। একটি হলো কোনটির চাহিদা বেশি এবং কোন স্কিলের প্রতি আপনার আগ্রহ রয়েছে। যেমন ধরুন, কন্টেন্ট রাইটাররা বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং করে বেশ ভালো অংকের টাকা উপার্জন করছেন৷ এখন কারো যদি লেখালেখিতে আগ্রহ থাকে এবং যেকোনো বিষয়ে গুছিয়ে লিখতে পারেন, তাহলে তিনি কন্টেন্ট রাইটিংয়ে নিজের স্কিল বাড়াতে কাজ করতে পারেন। 

আমি এটি জোর দিয়ে বলতে পারি, যদি নিজের পর্যাপ্ত স্কিল না থাকে, তাহলে কিন্তু কখনোই ফ্রিল্যান্সিংয়ে সাকসেসফুল হতে পারবেননা। তাই আগে সময় নিয়ে নিজেকে দক্ষ করে তুলুন। যখন নিজের স্কিল নিয়ে নিজের মধ্যে কনফিডেন্ট চলে আসবে, তখন নিজের পছন্দমতো বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং সাইটে প্রোফাইল ক্রিয়েট করুন৷ 

নতুনদের জন্য ফাইভার বেশ ভালো একটি ফ্রিল্যান্সিং সাইট৷ তবে চাইলে অন্যান্য সাইটেও নিজের প্রোফাইল ক্রিয়েট করতে পারেন৷ তবে এক্ষেত্রে সবসময় মনে রাখবেন, প্রোফাইল ক্রিয়েট করার সময় নিজের ব্যাপারে কোন ভুয়া তথ্য দেয়া যাবেনা। বরং সঠিকভাবে নিজের তথ্য দিয়ে প্রোফাইল তৈরি করুন৷

এসব ফ্রিল্যান্সিং সাইটে একজন ফ্রিল্যান্সারের মূল কাজ হলো নিজের স্কিলের মাধ্যমে ক্লায়েন্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। তাই প্রোফাইলে সঠিকভাবে নিজের স্কিল সম্পর্কে লিখুন। এখানে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সবাইকে মাথায় রাখতে হবে, সেটি হলো ফাইভারসহ অন্যান্য যে সাইটেই কাজ করতে চান, সেই সাইটে ফ্রিল্যান্সিং করার যে নিয়মকানুন রয়েছে সেগুলো আগে ভালোমতো পড়ে নিন৷ এতে নিজের প্রোফাইল ব্যান হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবেনা। 

এছাড়াও আমি বিগিনারদের জন্য টিপস হিসেবে বলবো, ফ্রিল্যান্সিং জার্নির শুরুর দিকে যতটুকু সম্ভব অনলাইনে অ্যাকটিভ থাকার চেষ্টা করবেন, এতে করে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়। পাশাপাশি যখন ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ নিয়ে কথা বলবেন, তখন মার্জিতভাবে কথা বলবেন এবং কথার মাধ্যমে নিজের স্কিলকে তাদের সামনে উপস্থাপন করবেন। এরপর যখন ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে কাজের অর্ডার পাওয়া শুরু করবেন, তখন সেগুলো সঠিক সময়ে ডেলিভারি দিন। যদি নতুনরা এই টিপসগুলো ফলো করে নিয়মিত ফ্রিল্যান্সিংয়ের পেছনে সময় দিতে থাকেন, তাহলে দেখবেন ধীরে ধীরে ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে সাড়া পেতে শুরু করবেন।

এতটুকুই ছিলো ফ্রিল্যান্সিং কি এবং নতুনরা কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারেন সে সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা৷ আমি চেষ্টা করেছি নতুন হিসেবে একজন মানুষের ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে যেসব বিষয় জানা প্রয়োজন সেগুলোর প্রতিটিই তুলে ধরতে। পরিশেষে এটুকুই বলতে চাই, ফ্রিল্যান্সিংয়ে সাকসেস পেতে হলে এটির পেছনে সময় দিতে হবে এবং ধৈর্য্যের সাথে নিজের স্কিলকে কাজে লাগিয়ে ক্লায়েন্টদেরকে সার্ভিস দিতে হবে। তাহলেই একজন মানুষের পক্ষে সাকসেসফুল হওয়া সম্ভব হবে। 

আরো পড়ুনঃ ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং করতে হয় শিখে বাড়িতে বসেই হাজার হাজার ডলার ইনকাম করবেন

আমাদের লেখা ভালো লাগলে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে পাশে থাকবেন।

Leave a Comment