পুষ্টিগুণ এবং শারীরিক উপকারিতার ক্ষেত্রে বাদামের কোনও বিকনপ নেই। আমাদের স্বাস্থ্য চাহিদার অধিকাংশ প্র্যোজনীয় উপাদানগুলো বাদামে বিদ্যমান। এতে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং প্রোটিন যা স্বাস্থ্য ও ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। বাদাম খেতে অনেকেই পছন্দ করেন। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে- নিয়মিত কেউ যদি এক বাটি করে বাদাম খাওয়া শুরু করেন, তাহলে শরীরে এমন কিছু অ্যান্টি ডিজিস উপাদানের প্রবেশ ঘটে, যা মানব শরীরের নানা ধরনের রোগ নির্মূল করে। শারীরিক উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার হিসেবে বাদামের বিকিল্প অন্য খাবার খুব কমই আছে। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে একজন ব্যক্তির প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ বাদাম খাওয়া উচিত।
সুতরাং, চলুন আজ আমরা জেনে নিই বাদামের উপকারী গুণ কি কি?
* ক্লান্তি দূর করেঃ বাদাম শক্তির ভালো উৎস। নিয়মিত বাদাম খেলে শরীরের ক্লান্তি দূর হয়।
* বাদাম হাঁড় ও দাঁত মজবুত করেঃ বাদামে আছে প্রচুর পরিমাণ ফসফরাস। আমরা জানি, শরীরের মধ্যে থাকা উপাদান ফসফরাস দেহের হাড় ও দাঁতের গঠন শক্ত ও মজবুত করতে ভূমিকা রাখে। যদি কেউ প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ বাদাম গ্রহণ করে, তবে তার দেহের হাড় আগের চেয়ে অনেকগুণ পরিমাণ শক্তিশালী হবে এবং হাড়ের বিভিন্ন রকম রোগ হতে রেহাই পাবে।
* ব্রেইনের শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করেঃ কাজু বাদামে এক প্রকার তাল থাকে যা ভিটামিন বি সমৃদ্ধ। এর জন্য এটি একটি শক্তিশালী খাদ্য হিসাবে পরিচিত। বাদামে আছে কগনিটিভ পাওয়ার। আর এই কগ্নিটিভ পাওয়ার আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষমতা এবং চিন্তা শক্তি বৃদ্ধি করে। ফলাফল সরুপ, বাদাম ব্রেইনের শক্তি এবং ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
* রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করাঃ বাদামে পটাসিয়ামের পরিমাণ উচ্চ মাত্রায় থাকে এবং সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকে। যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
* কোলেস্টেরল কমায়ঃ নিয়মিত বাদাম খাওয়ার দ্বারা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়। বাদাম উচ্চ প্রোটিন সামগ্রী হওয়ার কারণে দ্রুত হজমের শক্তি বাড়ায়। প্রতিদিন যদি কেউ ভেজানো কাজু বাদাম খেয়ে থাকে তাহলে তার অন্ত্রে কিছু স্পেসিপিক এনজাইমের নিঃস্বরণ ঘটে যা হজম প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ, কাজু বাদাম হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
* বাদাম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ বাদামে আছে ম্যাগনেসিয়াম। যখন আমাদের শরীরে রক্তে শর্করার পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পায়, তখন সেটাকে ডায়াবেটিস বলা হয়। ম্যাগনেসিয়াম এমন উপাদান যা রক্তে শর্করার পরিমাণ কমিয়ে দেয়। সুতরাং বাদামে থাকা ম্যাগনেসিয়াম রক্তে শর্করার পরিমাণ কমিয়ে এনে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
* দৈহিক ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাদামের ভূমিকাঃ প্রতিদিন বাদাম খাওয়ার ফলে আমাদের অনেকটা ক্ষিধে কমে যাওয়ায় পরোক্ষভাবে বাদাম ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপকার করে।
* স্বাস্থ্যকর হৃদয়ঃ বাদামে এক প্রকার অ্যাসিড পাওয়া যায় যা হার্টের পক্ষে খুব ভালো। এছাড়াও দস্তা, ম্যাগনেসিয়াম, তামা এবং লোহার মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
* মেজাজ ভালো রাখেঃ আপনি যদি দিনে একবার অন্তত বাদাম খান তাহলে আপনাকে ক্যালারির জন্য অতিরিক্ত খাবার খেতে হবে না। বাদাম খাদ্য মেজাজ হিসাবে পরিচিত। বাদাম মনের বিষণ্ণতা দূর করে মন রিফ্রেশ করে তোলে। বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ব্যক্তি প্রতিনিয়ত বাদাম আহার করে তুলনামূলিকভাবে তার মেজাজ অন্য ব্যক্তিদের চেয়ে বহুগুণে ভালো থাকে।
* ক্যান্সার থেকে বাঁচায়ঃ ক্যান্সারের মূল কারণই হলো অনিয়ন্ত্রিতিভাবে কোষ বৃদ্ধি পাওয়া। কাজু ক্যান্সার কোষগুলোকে ক্রমবর্ধমান থেক আটকায়। আর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সাধারণত আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে কোষের ক্ষতিকে হ্রাস করে। সেক্ষেত্রে বাদামে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান। সুতরাং বাদাম আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়া থেকে সুরক্ষা রাখে। কাজু বাদাম নিয়মিত খেলে ক্যান্সারের কিছু রূপ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
এক মুঠো বাদাম খেলে শরীরে মাত্র ১৬১ ক্যালারি প্রবেশ করে। যার কারণে বাদাম খেলে শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার কোনও ভয় থাকে না। এবং সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত বাদাম খাওয়ার অভ্যাস করলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ২৫-৩৮ শতাংশ কমে যায়।