রহিমের খুব ইচ্ছা গভীর সমুদ্রের নিচে কি রহস্য লুকিয়ে আছে তা দেখার। এখন আপনারাই বলুন রহিমের পক্ষে কি সেখানে যাওয়া সম্ভব? মোটেও নয়। কিন্তু রহিম যদি চায় তাহলে একটি বিশেষ প্রযুক্তির সাহায্যে সে গভীর সমুদ্রে কি আছে সেটি সমুদ্রের নিচে না গিয়েই দেখতে পারে এবং অনুভব করতে পারে। কিভাবে ? ভার্চুয়াল রিয়েলিটির বদৌলতে। আমি নিশ্চিত যদি আপনার তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করতে ভালো লাগে,তাহলে আপনি ইতোমধ্যেই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি জেনে ফেলেছেন এবং একই সাথে ভার্চুয়ালি রিয়েলিটির সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কেও আপনার জানা আছে
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি: প্রযুক্তির এক অনবদ্য আবিষ্কার
তথ্য প্রযুক্তির জগতে যে অসাধারণ আবিষ্কারটি রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি করেছে সেটি হল ভার্চুয়াল রিয়েলিটি। এটি বিজ্ঞানের এমন এক আবিষ্কার যেটি শিক্ষা, গবেষণা এমনকি চিকিৎসার ক্ষেত্রেও প্রতিনিয়ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। আর মানুষের বিনোদনের ক্ষেত্রে এটির ভূমিকা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে যদি এখনো এই কনসেপ্টটি আপনার কাছে নতুন হয়ে থাকে, তাহলে এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। কারণ আজকের আর্টিকেলে আমি আলোচনা করব ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কিভাবে কাজ করে, ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রকারভেদ,ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সুবিধা অসুবিধা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি
আপনারা যদি ভার্চুয়ালি রিয়েলিটি কিভাবে কাজ করে সেটি ভালোমতো বুঝতে চান তাহলে আপনাদেরকে শুরুতেই জানতে হবে এই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি।
খুব সহজ ভাষায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হচ্ছে এমন একটি পরিবেশ বা এনভায়রনমেন্ট যেটির বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই এবং এই বিশেষ পরিবেশটি তৈরি করা হয় কম্পিউটারের সাহায্যে। অর্থাৎ আপনি যদি ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে থাকেন, তাহলে আপনি আপনার চোখের সামনে অনেক কিছু দেখবেন এবং অনুভব করবেন ঠিকই, কিন্তু বাস্তবে সেগুলোর কোনটি অস্তিত্ব থাকবে না।
আশা করি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি সেটি কিছুটা বোঝাতে পেরেছি। এটি এমন একটি আবিষ্কার যেটির ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব দুটিই রয়েছে। তবে যদি ইতিবাচক প্রভাব গুলোকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায় তাহলে তা মানব কল্যাণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
যারা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে কাজ করেন, তারা তারা এই রিয়েলিটিতে যেমন আমাদের চারপাশের বিভিন্ন বাস্তব দৃশ্য অন্তর্ভুক্ত করেন, একই সাথে মানুষের কল্পনার বিভিন্ন দৃশ্যকেও কম্পিউটারের আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে বাস্তবে রূপ দেয়ার প্রচেষ্টা চালান।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি তৈরি করার জন্য থ্রি ডি ,ফোর ডি কিংবা ফাইভ ডি প্রযুক্তির সহায়তা নেয়া হয়। একারণেই যারা এই রিয়েলিটি এক্সপেরিয়েন্স করতে যান, তারা তাদের চোখের সামনে যেগুলো দেখেন সেগুলো যে বাস্তবে বিরাজ করে না সেটি বুঝতেই পারেন না। বরং সেসময় ওই দৃশ্যগুলোই তাদের কাছে মনে হয় সত্য।
এই কারণে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে আপনি চাইলে পৃথিবীর গভীরতম জঙ্গল আমাজনের ভেতরে যেমন ঘুরে আসতে পারবেন, তেমনি ভাবে যদি আপনার ইচ্ছে হয় যে আপনি পৃথিবী থেকে দূরের কোনো গ্রহে হেঁটে বেড়াবেন, তাহলে সেটিও এই রিয়েলিটির মাধ্যমে এক্সপেরিয়েন্স করা সম্ভব।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ইতিহাস
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি সেটি তো জেনে নিলেন। এবার ছোট্ট করে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ইতিহাস সম্পর্কে জানাই। সত্যি বলতে এটি আবিষ্কার করার যাত্রা শুরু হয় যখন ১৮৩৮ সালে বিজ্ঞানীরা স্টেরিওস্কোপ নামের একটি যন্ত্র তৈরি করেন। এটি যখন দর্শকদের দেখানো হতো তখন টুইন মিরর ব্যবহার করা হতো। অর্থাৎ তখনও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি আবিষ্কার হয়নি ঠিকই, কিন্তু এর কাছাকাছি এক ধরনের সিস্টেমের ব্যবহার শুরু হয়েছিল।
পরবর্তীতে ১৯৫৭ সালের দিকে মরটন হেলিং এর হাত ধরে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তির যাত্রা শুরু হয়। তিনি সেনসোরেমা সিমুলেটর নামের একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন। এ যন্ত্রে তিনি কিভাবে বাস্তবিক অর্থেই ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রয়োগ করা সম্ভব সেটি দেখান।
আমরা এখন যে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সম্পর্কে জানি সেটির যাত্রা শুরু হয় ১৯৮০ সালের দিকে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির এত উন্নতির পেছনে যে মানুষটির অবদান রয়েছে তিনি হলেন হ্যাকার লেনিয়ার। তিনি ভিজুয়াল প্রোগ্রাম ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা নামেও সবার কাছে পরিচিত। মূলত তার গবেষণা ও অসামান্য অবদানের কারণে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি আজকে এত উন্নত অবস্থানে আসতে পেরেছে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির উপাদান কি কি?
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির কয়েকটি মূল উপাদান রয়েছে। এই উপাদানগুলো সম্পর্কে জানলেই আপনারা বুঝতে পারবেন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কিভাবে কাজ করে। একজন মানুষকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির এক্সপেরিয়েন্স দিতে প্রয়োজন কিছু বিশেষ হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অন্যতম প্রধান উপাদান হলো ইফেক্টর। এটি এমন একটি হার্ডওয়্যার যেটি ব্যবহারকারী পরিধান করলে তিনি ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে প্রবেশ করেন। ইফেক্টরের উদাহরণ হলো ডেটা গ্লোভস, ভিআর হেডসেট, বডি স্যুট ইত্যাদি।
এবার ভিআর হেডসেট নিয়ে একটু বলি। ভিআর হেডসেট- নাম শুনেই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এটি হেডফোন জাতীয় কোনো ডিভাইস, তাইনা? ভিআর হেডসেট হচ্ছে সেই ডিভাইস যেটি পরার মাধ্যমে আপনি রিয়েল লাইফ থেকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে প্রবেশ করবেন। যেহেতু ভার্চুয়াল রিয়েলিটি খালি চোখে দেখা যায়না, তাই এই হেডসেট পরে নিতে হয়। এই একেকটি হেডসেটে থাকে প্রজেক্টর, লেন্স, মাইক্রোফোন, দুই ধরণের ক্যামেরা, বিশেষ স্ক্রিন, স্পিকার ইত্যাদি।
এবার আসি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হার্ডওয়্যার নিয়ে যেটি হল রিয়েলিটি সিমুলেটর। রিয়েলিটি সিমুলেটর হচ্ছে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে আপনার গতিবিধি ও কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন সেন্সর। এটির একটি উদাহরণ হলো মোশন সেন্সর, যেটিকে আবার মোশন কন্ট্রোলারও বলা হয়। এটি হলো এমন একটি সেন্সর যার মাধ্যমে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে আপনি যা করতে চান সেটিই করতে পারবেন। যেমনঃ যদি গভীর বনে থাকা ফুল গাছ থেকে ফুল ছিঁড়তে চান, তাহলে মোশন সেন্সর আপনার সেই ইচ্ছা অনুযায়ী এমনভাবে আপনার সামনে থাকা দৃশ্য পরিবর্তন করবে, যাতে করে আপনার মনে হবে আপনি বুঝি সত্যিই গাছের ফুল ছিঁড়ছেন৷
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির এক্সপেরিয়েন্স শতভাগ পারফেক্ট করতে যেটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সেটি হলো সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সফটওয়্যার হচ্ছে লিপ মোশন, গুগল স্কেল, ফোর্জ ইত্যাদি। এগুলো ছাড়াও ভার্চুয়াল রিয়েলিটির আরেকটি উপাদান হচ্ছে জিওমেট্রি, যেটি হল মূলত ভার্চুয়াল রিয়েলিটি তে থাকা বিভিন্ন এলিমেন্টের বিস্তারিত ইনফরমেশন।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি ভাবে কাজ করে?
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি এবং এর ইতিহাস, উপাদান তো জেনে ফেললেন৷ এবার চলুন জেনে আসা যাক ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কিভাবে কাজ করে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে ব্যবহৃত ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তি যেন কাজ করে সে উদ্দেশ্যে শুরুতেই যিনি এই রিয়েলিটি এক্সপেরিয়েন্স করছেন তাকে হেডসেট বা বিশেষ ধরণের গ্লাস পরতে হয়। তারপর দুই চোখে আলাদা সিনারি কিংবা এক স্ক্রিনে আলাদা দুটি সিনারি দেখানো হয় যাতে করে ব্যবহারকারীর ত্রিমাত্রিক অনুভূতি তৈরি হয়।
এই কাজটি করা হয় কম্পিউটারের উন্নত প্রযুক্তি ও গ্রাফিক্সের সাহায্যে। তারপর মোশন সেন্সরের সাহায্যে ব্যবহারকারীর গতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। শুধু গতিই বা বলছি কেন, অনেকসময় ব্যবহারকারীর দেখা জগত যেন আরো আসল মনে হয় সেজন্য তাদেরকে বুট কিংবা গ্লাভসও পরানো হয়৷
Read More
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কত প্রকার ও কি কি
আপনারা হয়তো জেনে অবাক হবেন, ভার্চুয়াল রিয়েলিটির কয়েকটি প্রকারভেদ রয়েছে। এই প্রকারভেদ অনুযায়ী একেক ধরনের ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে ইউজাররা একেক রকম এক্সপেরিয়েন্স পেতে পারেন। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কত প্রকার ও কি কি।
Fully Immersive ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে যখন একজন মানুষ প্রবেশ করবেন, তখন তিনি তার চোখের সামনে যা দেখবেন, যা করবেন অথবা যেটি স্পর্শ করবেন, সেটি তার কাছে সম্পূর্ণভাবে বাস্তব মনে হবে। অর্থাৎ এটিতে প্রবেশ করা মাত্র আপনার মনে হবে আপনি সেই জগতেরই অংশ। এই ধরনের ভার্চুয়াল রিয়েলিটির এক্সপেরিয়েন্স নিতে গেলে আপনাকে মোটা অংকের টাকা খরচ করতে হবে।
Non Immersive ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হচ্ছে এমন এক ধরনের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি যেটি আপনাকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কেমন হতে পারে সেই এক্সপেরিয়েন্স দেবে , কিন্তু আপনি পুরোপুরি ভাবে সেই জগতকে সত্য বলে ভাবতে পারবেন না। অর্থাৎ আপনি ওই ভার্চুয়াল রিয়েলিটির বিভিন্ন কর্মকান্ড কন্ট্রোল করতে পারবেন তবে সেই রিয়েলিটির অংশ হতে পারবেন না। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে যে গেমগুলো ডিজাইন করা হয় ,সে গেমগুলোতে এই এক্সপেরিয়েন্স পাওয়া যায়।
Semi Immersive ভার্চুয়াল রিয়েলিটি – নাম শুনেই আপনারা বুঝতে পারছেন এটি fully immersive ও non immersive ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এ দুটির সংমিশ্রণে তৈরি করা হয়েছে। এই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এক্সপেরিয়েন্স করার সময় আপনি আপনার চোখের সামনে অনেক কিছু দেখবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনার কোন গতিবিধি থাকবে না কিংবা আপনি কোন কিছু স্পর্শ করতে পারবেন না।
Collaborative ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে বিভিন্ন স্থানে থাকা একাধিক মানুষ একসাথে যুক্ত হয়ে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির এক্সপেরিয়েন্স গ্রহণ করতে পারেন।
Augmented ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এখনকার দিনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খুব বেশি ব্যবহার করে। এই ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে কোন স্থানে এমন কিছু বস্তু কিংবা ক্যারেক্টার প্লেস করা হয় ,যেগুলোর বাস্তবে কোন অস্তিত্ব থাকে না কিন্তু আপনি সেগুলো দেখতে পাবেন।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সুবিধা অসুবিধা
আমি জানি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সম্পর্কে এত তথ্য জানার পর আপনারা নিশ্চয়ই জানতে চাইবেন যে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সুবিধা অসুবিধা কি কি। তাই এবার আমি সে তথ্যগুলোই জানিয়ে দিচ্ছি।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সুবিধা
যেহেতু ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে কোন কাজ না করে কিংবা কোন স্থানে না গিয়েই সেটি সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা গ্রহণ করা যায়, তাই বর্তমানে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য ভার্চুয়াল রিয়েলিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ কারণেই বিভিন্ন যানবাহন চালানো, যেমনঃ বিমান কিংবা ট্রেন চালনা অথবা কোন মেশিন কিভাবে অপারেট করা যেতে পারে সেটি শেখাতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, যে কাজগুলো ঝুঁকিপূর্ণ সেগুলো না করেই সে কাজ সম্পর্কে সবাইকে প্রশিক্ষণ দিতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তির জুড়ি মেলা ভার। এখন অনেক জায়গাতেই সৈনিকদের যুদ্ধ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ প্রদান করতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
শুধু প্রশিক্ষণই বা বলছি কেন, বর্তমানে শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি। ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি কিংবা বায়োলজির বিভিন্ন জটিল বিষয় সহজ করে শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করতে এই প্রযুক্তি অনেক ক্লাসরুমে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের কাছে পড়াশোনার ব্যাপারটি হয়ে উঠছে আরো আকর্ষণীয়। তবে সত্যি বলতে বাংলাদেশে এখনো এই ব্যাপারটি তেমন একটা দেখা যায় না।
আবার ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি দারুন কাজে লাগছে। বিশেষ করে কোন পণ্য ক্রেতাদের কিনতে উৎসাহিত করার জন্য এই প্রযুক্তি কাজে লাগানো হচ্ছে। যেমনঃ আপনারা যদি বাড়ি রং করানোর জন্য কোন পেইন্টের দোকানে যান ,তাহলে দেখতে পাবেন কোন একটি পেইন্ট আপনার দেয়ালে কেমন লাগবে সেটি আপনি ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে দেখে নিতে পারবেন এবং পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন যে ওই পেইন্ট আপনি কিনবেন কিনা।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হচ্ছে কোন দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে এটি ব্যবহার করা যায়। যেমনঃ এখন অনেক জাদুঘরেই আপনারা দেখতে পাবেন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে দর্শনার্থীদের দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা দেয়া হচ্ছে।
এছাড়াও আরেকটি ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সুবিধা রয়েছে সেটি হচ্ছে চিকিৎসা ক্ষেত্র। রোগীদের চিকিৎসা করতে কিংবা চিকিৎসা সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণার ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি খুবই কাজে আসছে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অসুবিধা
আপনারা নিশ্চয়ই জানেন প্রতিটি বিষয়ে ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব থাকে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটিও এর ব্যতিক্রম নয়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটিরও কিছু অসুবিধা রয়েছে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মূল অসুবিধা হচ্ছে এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। যদি কেউ এটির এক্সপেরিয়েন্স নিতে চান তাহলে তাকে বেশ ভালো অংকের টাকা খরচ করতে হয়।
এছাড়াও যারা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন গেম খেলেন তারা এই গেমে পরবর্তীতে আসক্ত হয়ে পড়েন। এতে করে তাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হয় এবং একই সাথে দেখা যায় তারা বাস্তব জগতের প্রতি সেভাবে আগ্রহ পাচ্ছেন না।
এর পাশাপাশি যদি ক্রমাগত ভার্চুয়াল রিয়েলিটির এক্সপেরিয়েন্স নেয়া হয়, তাহলে সেখান থেকে মাথাব্যথা, চোখে সমস্যা, ব্যাক পেইন ,ঘাড়ে ব্যথা ইত্যাদির মতো শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আশা করি আপনারা ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। সব সময় মনে রাখবেন কোন কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। তাই যদি ভার্চুয়াল রিয়েলিটির এক্সপেরিয়েন্স আপনার কাছে খুব ভালো লেগেও থাকে, তাহলেও চেষ্টা করবেন পরিমিতভাবে এটির ব্যবহার করতে।
শেষ কথা
এটুকুই ছিল ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি সে সম্পর্কে আজকের আলোচনা। যা করি আপনারা ভার্চুয়াল রিয়েলিটির উপাদান, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কিভাবে কাজ করে, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কত প্রকার ও কি কি, ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব ইত্যাদি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন।
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ঘুরে আসুন আমাদের ফেসবুক পেইজ থেকে!