ভিডিও এডিটিং করে একমাসে ১০০০ ডলার আয় করতে চান? তাহলে জেনে নিন ২০২২ সালের Best 5 টি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার কোনগুলো

ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার সম্পর্কে জানতে এখন সবাই কম-বেশি আগ্রহী। বিশেষ করে আজকালকার তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ভিডিওগ্রাফি এবং প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং এ দুটির প্রতিই বিশেষ ঝোঁক লক্ষ্য করা যায়। তরুণদের মধ্যে অনেকেই এখন শখ করে নিজের প্রিয় স্মৃতিগুলোকে ভিডিও আকারে বন্দী করে রাখতে ভালোবাসেন। আবার অনেকে ভিডিওগ্রাফিকে প্রফেশন হিসেবেও নিয়ে থাকেন। তারা বিয়ে,জন্মদিন ইত্যাদি অনুষ্ঠানের ভিডিওগ্রাফার হিসেবে কাজ করেন৷ এভাবে তারা যেমন নিজের প্যাশনকে প্রফেশন হিসেবে নিতে পারেন, তেমনিভাবে অর্থনৈতিকভাবেও স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারেন। 

শুধু ইভেন্ট ভিডিওগ্রাফিই নয়,বাংলাদেশে এখন অনেক মানুষ রয়েছেন যারা ট্রাভেলিং পছন্দ করায় ও ভোজনরসিক হওয়ায় ট্রাভেল ভ্লগ বা ফুড ভ্লগ বানিয়ে থাকেন। আবার অনেকেই লাইফস্টাইল ভ্লগ অর্থাৎ প্রতিদিন কি করছেন না করছেন সেগুলোও ভিডিওর মাধ্যমে ইউটিউবে বা সোশ্যাল মিডিয়াতে সবার সাথে শেয়ার করেন। তারা কিন্তু এসব ভিডিও ফেসবুক ও ইউটিউবে পোস্ট করে ইনকামও করে থাকেন। 

এখন ইভেন্ট ভিডিওগ্রাফি হোক, ভ্লগ হোক কিংবা শখের বশে শেয়ার করা ভিডিওই হোক, যারা ভিডিওগুলো দেখেন, তারা সবাই চান ভিডিওগুলো সুন্দরভাবে তাদের সামনে উপস্থাপন করা হোক। একারণে আকর্ষণীয়ভাবে যেকোনো ভিডিও উপস্থাপন করতে ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার সম্পর্কে জ্ঞান রাখা অত্যন্ত জরুরি। আজকের এই লেখাটিতে আমি আলোচনা করবো ভিডিও এডিটিং কী এবং ২০২২ সালের সেরা ৫টি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার সম্পর্কে। 

ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার

ভিডিও এডিটিং কী ও এটি কেন শিখবেন? 

ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার সম্পর্কে তো বলবোই। তার আগে চলুন ভিডিও এডিটিং কী সে সম্পর্কে আপনাদের একটু ধারণা দেই। আমরা তো প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের ভিডিও দেখে থাকি। হতে পারে সেটি কোন শিক্ষামূলক ভিডিও, হতে পারে কোন রেসিপি অথবা হতে পারে কোন একটি ভ্লগ। 

বলুনতো এই ভিডিওগুলোতে কি শুধু আমরা ভিডিওই দেখি? অবশ্যই নয়। এখনকার সময়ের বেশিরভাগ ভিডিও আরো সুন্দর করে সবার সামনে উপস্থাপন করার জন্য এগুলোতে বিভিন্ন ট্রানজিশন, ফিল্টার অথবা টেক্সট ইত্যাদি যুক্ত করা হয়। তার পাশাপাশি অ্যাডজাস্ট করা হয় ভিডিওগুলোর ব্রাইটনেস, কালার কনট্রাস্ট, স্যাচুরেশন ইত্যাদি। এই প্রসেসটি কেই ভিডিও এডিটিং বলা হয়। 

ভিডিও এডিট করার জন্য ল্যাপটপ কিংবা পিসিতে বিভিন্ন ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে এডিটের কাজগুলো করা হয়। তবে অনেকে এখন তাদের স্মার্টফোন ব্যবহার করেও ভিডিও এডিটর কাজ করেন। তবে যারা প্রফেশনালি ভিডিও এডিটিং শিখতে চান এবং এটিকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চান, তাদের জন্য পরামর্শ থাকবে ল্যাপটপ কিংবা পিসিতে বিভিন্ন সফটওয়্যারের সাহায্যে ভিডিও এডিটিং শিখে ফেলা। 

এক্ষেত্রে একটি কথা বলে রাখা ভালো। ভিডিও এডিটিং একটি ক্রিয়েটিভ কাজ। ভিডিও এডিট করার জন্য প্রচুর ধৈর্য্য এবং সময় নিয়ে কাজ করার মানসিকতা থাকা প্রয়োজন। যদি আমি ২০২২ সালে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বলতে চাই, তাহলে বলতে হয় এখন একজন দক্ষ ভিডিও এডিটরের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। 

যদি আপনি বিভিন্ন ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার সম্পর্কে দক্ষ হন এবং সুন্দরভাবে ভিডিও এডিট করতে জানেন, তাহলে আপনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভিডিও এডিটর হিসেবে জব করতে পারবেন। এর পাশাপাশি কিন্তু ফ্রিল্যান্সিংয়ে রয়েছে ভালো অ্যামাউন্টের অর্থ আয় করার দারুন সুযোগ। বিশেষ করে যারা বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং সাইট যেমন ফাইভার কিংবা আপওয়ার্কে ফ্রিল্যান্স ভিডিও এডিটর হিসেবে কাজ করেন, তারা প্রতিমাসে ভালো অঙ্কের অর্থ আয় করে থাকেন। আর যেহেতু এখনকার যুগ ডিজিটাল প্রযুক্তি ভিত্তিক, তাই আগামী অনেক বছরেও ভিডিও এডিটর এর চাহিদা কমবে না। তাই যদি এই সেক্টরে আগ্রহ থাকে তাহলে এটি ক্যারিয়ার হিসেবে নেয়ার কথা ভেবে দেখতে পারেন। 

ফ্রিল্যান্সিং সাইট সম্পর্কে আরো জানতে পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং সাইট কি? ফ্রিল্যান্সিং সাইটে কাজের সুবিধা কি কি? ২০২২ সালের সেরা ৫টি ফ্রিল্যান্সিং সাইট সম্পর্কে জেনে নিন আজই!

শুধু চাকরি বা ফ্রিল্যান্সিংয়ের কথাই বলছি কেন, যদি আপনি একজন ইউটিউবার হয়ে থাকেন অথবা ফেসবুকে বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিও তৈরি করে শেয়ার করে থাকেন, তাহলেও আপনাকে ভিডিও এডিটিং শিখতে হবে। কারণ যারা ভিডিওগুলো দেখেন তারা সবসময় চান ভিডিওগুলো যেন সুন্দর হয় এবং আকর্ষণীয় ভাবে তাদের সামনে প্রেজেন্ট করা হয়। এই সুন্দরভাবে ভিডিও প্রেজেন্ট করার কাজটি যথাযথভাবে করতেই কয়েকটি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে এবং অন্তত একটি সফটওয়্যার দিয়ে ভিডিও এডিট করতে জানতে হবে। কারণ ভিডিও যত বেশি আকর্ষণীয় হবে, তত বেশি মানুষ সেটি দেখবে এবং আয়ের পরিমাণও তত বাড়বে। তাই যারা ইউটিউবে বা ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করে সেগুলোর মাধ্যমে আয় করতে চান, তাদের অবশ্যই ভিডিও এডিটিং শেখা উচিৎ। 

২০২২ সালের সেরা ৫টি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার কোনগুলো? 

আশা করি ভিডিও এডিটিং কী এবং এটি কেন শেখা প্রয়োজন সে ব্যাপারে আপনারা বুঝতে পেরেছেন। সবসময় মনে রাখবেন, যদি একটি ভাল মানের ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার ব্যবহার করেন, তাহলে কিন্তু নিজের প্রতিটি ভিডিওকে নিয়ে যেতে পারবেন প্রফেশনাল লেভেলে। ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার তো অনেকগুলোই রয়েছে, কিন্তু কোনগুলো ব্যবহার করবেন – এই প্রশ্নটিই সবার মনে ঘুরপাক খেতে থাকে। তাই সবার মনে জমে থাকা কনফিউশান দূর করতে এখন আমি ২০২২ সালের সেরা ৫টি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার সম্পর্কে আলোচনা করবো। 

০১। এডোবি প্রিমিয়ার প্রো (Adobe Premiere Pro)

এডোবি ক্রিয়েটিভ ক্লাউডের আন্ডারে থাকা এই ভিডিও  এডিটিং সফটওয়্যার সম্পর্কে যারা ভিডিও এডিটিং জানেননা তারাও ধারণা রাখেন। ২০০৩ থেকে এডোবি প্রিমিয়ার প্রো এর যাত্রা শুরু হয় এবং এখন এটি গোটা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে নির্ভরযোগ্য একটি সফটওয়্যার। এই সফটওয়ারটি মূলত তাদের জন্য যারা তাদের ভিডিওকে প্রফেশনাল লেভেলের ভিডিওর মতো করে দর্শকদের সামনে প্রেজেন্ট করতে চান। 

এই ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার টি অপারেট করা কিছুটা কঠিন হলেও যদি আপনি একবার এটি শিখে ফেলতে পারেন, তাহলে বুঝতে পারবেন একটি ভিডিওর ওভারঅল কোয়ালিটিকে টপ নচ বানিয়ে দিতে এই সফটওয়ারটি কতটুকু সাহায্য করে। এডোবি প্রিমিয়ার প্রো তে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের ইফেক্ট, ট্রানজিশন, লেয়ার অ্যাডজাস্ট ছাড়াও আরো বিভিন্ন ফিচারস। এডোবি প্রিমিয়ার প্রো শুধুমাত্র ল্যাপটপ কিংবা পিসিতে ব্যবহার করা যায়। এটি ইন্সটল করার পর সাত দিনের জন্য এটির ট্রায়াল ভার্সন ব্যবহার করতে পারলেও পরবর্তীতে প্রতিমাসে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি প্রদানের মাধ্যমে এটি ব্যবহার করতে হবে। 

০২। ফিলমোরা (Filmora)

এডোবি প্রিমিয়ার প্রো নামক ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার বিগিনার ফ্রেন্ডলি না হওয়ায় এবার আমি আপনাদের বলবো ফিলমোরা নিয়ে। যারা ভিডিও এডিটিংয়ে নতুন কিংবা যারা চাইছেন বিগিনার ফ্রেন্ডলি সফটওয়্যার দিয়ে এডিটিং শিখবেন,তাদের জন্য ফিলমোরা বেস্ট অপশন। 

ফিলমোরার ইউজার ফ্রেন্ডলি সহজ ইন্টারফেসে ভিডিও এডিট করার জন্য যেসব বেসিক ফিচার প্রয়োজন সেগুলোর সবই পাবেন। তবে ফিলমোরা কিন্তু কোন ফ্রি সফটওয়্যার নয়, তাই যদি এটি ব্যবহার করতে চান তাহলে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে ব্যবহার করতে হব।  

০৩। ক্যামটাসিয়া স্টুডিও (Camtasia Studio)

আমি আজকের লেখাটি বিগিনারদের কে টার্গেট করে লিখছি বলেই এবার বলবো আরেকটি বিগিনার ফ্রেন্ডলি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার সম্পর্কে, সেটি হলো ক্যামটাসিয়া স্টুডিও। বিশেষ করে যাদের ইউটিউবভিত্তিক ভিডিও টিউটোরিয়াল বানানোর প্রতি আগ্রহ রয়েছে, তাদের জন্য এই সফটওয়্যারটি একদম সেরা। এই সফটওয়্যারটির ইন্টারফেসও অত্যন্ত সহজ হওয়ায় ট্রানজিশন কিংবা ইফেক্ট ইত্যাদি মোটামুটি সব ধরণের এডিটের কাজই করতে পারবেন। 

০৪। সাইবারলিংক পাওয়ারডিরেক্টর (Cyber link Power director)

যারা বিভিন্ন ধরনের অ্যাডভান্সড লেভেলের ফিচারস নিজেদের ভিডিওতে ব্যবহার করতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য সাইবারলিংক পাওয়ারডিরেক্টর একটি দারুন ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার। এটি ব্যবহার করে অন্যান্য সাধারণ ফিচারের পাশাপাশি ভিডিও কোলাজ করতে পারবেন, মাল্টি ক্যাম এডিটিং ও ভিডিওর কালার অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে পারবেন। 

শুধু তাই নয়, এই ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যারটিতে সবধরণের ডাইমেনশনে এডিটিং করতে পারবেন। তাই যদি প্রফেশনাল লেভেলের ভিডিও বানানো হয় আপনার প্যাশন, তাহলে নির্দ্বিধায় এটি বেছে নিন। সাইবারলিংক পাওয়ারডিরেক্টর ব্যবহার করতে চাইলেও আপনাকে প্রতিমাসে গুনতে হবে নির্দিষ্ট সাবস্ক্রিপশন ফি। 

০৫। ভেগাস প্রো (Vegas Pro)

২০২২ সালের সেরা পাঁচটি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার এর তালিকায় পাঁচ নম্বরে রয়েছে ভেগাস প্রো। এই সফটওয়্যারের বিভিন্ন ইউনিক পাওয়ারফুল ফিচারস এটিকে করে তুলেছে বহু মানুষের প্রিয় সফটওয়্যার। এটি ব্যবহার করে অনেক মানুষ বর্তমানে  প্রফেশনাল লেভেলের ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছেন। এটির একটি মজার ফিচার হলো আপনি চাইলে এটির ইন্টারফেস নিজের সুবিধা ও পছন্দমতো কাস্টমাইজ করতে পারবেন। তবে অন্য সফটওয়্যারগুলোর মতো এটিও বিনামূল্যে ব্যবহার করা সম্ভব নয়। 

এটুকুই ছিল 2022 সালের সেরা পাঁচটি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার সম্পর্কিত আজকের বিস্তারিত আলোচনা। আশা করি সবাই এই তালিকা থেকে নিজেদের পছন্দমতো সফটওয়্যার বেছে নিয়ে ভিডিও এডিট করবেন৷ 

আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ঘুরে আসুন আমাদের ফেসবুক পেইজ থেকে!

 

Leave a Comment