সালাত বা নামাজ আল্লাহ পাকের ইবাদতসমূহের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। সালাত বা নামাজ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যা সাত বছর বয়সেই প্রশিক্ষণ শুরু করতে হয় আরো দশ বছর বয়সে ফরজ হয় এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেটা ফরজ থাকে। আর এই বিধান নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। তবে কিছু সময় আছে যে সময়গুলোতে নারীদের জন্য নামাজ মাফ করা হয়েছে এবং সে নামাজের জন্য গুনাহগার হতে হবে না।
যেমন মহিলারা যখন অপবিত্র থাকে অথবা সন্তান প্রসবের পর পবিত্র হওয়ার আগ পর্যন্ত যে নামাজগুলো কাজ হবে সেগুলো পুরোপুরি মাফ করা হয়েছে। অর্থাৎ হায়েযের সময় নামাজ রোজা আদায় করা নিষেধ। তবে নামাজ কাজা করতে হয় না কিন্তু রোজা পরবর্তীতে কাজা করতে হয়। কিন্তু দুই শ্রেণীর নারী আছেন যাদের নামাজ আল্লাহ তায়ালা কখনো কবুল করেন না এবং তাদের কোন আমল ঊর্ধ্বমুখী হয় না। তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা সেই নারীদের ভুলগুলো এবং ভুলের কারণেই তাদের কোন আমলই ঊর্ধ্বমুখী হয় না তাদের নামাজ কবুল হয় না তা নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
কেন সে নারীদের নামাজ কবুল হয় না বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন। হয়তো আপনার বাসায় সেরকম নারী থাকতে পারে তাদের সতর্ক করুন বা নিজেই তাদের দলভুক্ত হলে সতর্ক হয়ে যাবেন। এই দুই নারীর নামাজ কবুল হয় না তাদের মধ্যে এক নাম্বার হলোঃ সুগন্ধি ব্যবহার করে বাহিরে গমনকারী মহিলা।
নবী কারীম সাল্লাহু সাল্লাম ইরশাদ করেন →সেই মহিলার কোন নামাজ কবুল হয় না যে তার স্বামী ছাড়া অন্য কারো জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করে এবং যতক্ষণ না সে নাপাক ব্যক্তির মতো গোসল হয়ে পবিত্র না হয়, ততক্ষণ তার নামাজ কবুল হবে না।( সূত্র সিলসিলাতুল সহিহ হাদিস নাম্বারঃ ১০৩১)
এই হাদিস থেকে সহজেই অনুমেয় যে পর পুরুষের জন্য সুগন্ধি ব্যবহারকারী নারীর নামাজ কবুল হবে না। অন্য আরেকটি হাদীস রয়েছে হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম বলেছেনঃ যে নারী সেন্ট বা সুগন্ধি ব্যবহার করে মসজিদে আসে, আল্লাহ তায়ালা তার নামাজ কবুল করেন ওই ব্যক্তির মত যে কিনা অজু-গোসল ইত্যাদি এছাড়া অপবিত্র অবস্থায় মসজিদে এসে নামাজ পড়ে। আর আমরা জানি অপবিত্র অবস্থায় নামাজ কবুল হওয়া তো দুরের কথা অপবিত্র অবস্থায় নামাজ পড়া নিষেধ। (সূত্র সহীহুল জামে হাদিস নাম্বারঃ ৭৪৫৭, বায়হাকী হাদিস নাম্বারঃ ৩/২৪৫, শায়খ আলবানী, জিলবাবঃ ১৩৮)
হজরত আবূ উমামাহ (রাঃ) থেকপ বর্ণিত তিনি বলন, রাসূলে কারীম সাল্লাহু সাল্লাম ইরশাদ করেন→ তিন ব্যক্তির নামাজ কবুল হয় না এবং তাদের সৎ আমল গুলো ঊর্ধ্বমুখী হয় না।
এক নাম্বারঃ পলাতক গোলাম, যতক্ষণ না সে তার মালিকের নিকট ফিরে আসে।
দুইনাম্বারঃ যে স্ত্রীর ওপর স্বামী অসন্তুষ্ট থাকে।
তিন নাম্বারঃ মাতাল যতক্ষণ না জ্ঞান ফিরে।
অন্য বর্ণনায় এসেছে যে ব্যক্তি কোন ইমামের পিছনে নামাজ পড়লে অথচ ইমামকে তার পছন্দ না সে ব্যক্তির নামাজ কবুল হবে না। (তিরমিজি হাদিস নাম্বার ৩৬০, সহীহুল জামে হাদিস নাম্বারঃ ৩০৫৭)
এই হাদীস থেকে আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে স্ত্রীর ওপর শরীয়ত সম্মত কারণে স্বামী অসন্তুষ্ট থাকে,এই স্বামীর অসন্তুষ্টি অবস্থায় স্ত্রী নামাজ আদায় করলে সে নামাজ কবুল হবে না। অনেক আলেমদের মতে এই নামাজ কবুল না হওয়ার অর্থ হলো পরিপূর্ণরূপে কবুল না হওয়ার। তবে মহিলাদের জন্য সুসংবাদ হলোঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন→ কোন নারী যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রমজান মাসে রোজা রাখে, নিজের ইজ্জত আব্রু রক্ষা করে, স্বামীর নির্দেশ মান্য করে ,তবে জান্নাতের দরজা দিয়ে ইচ্ছে প্রবেশ করতে পারবে সুবাহানাল্লাহ। (সহিহ ইবনে হিব্বান হাদিস নাম্বারঃ ৪১৬৩)
সেই প্রেক্ষাপটেই প্রতিটি নারীর উচিত হবে তার স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখা।আর কোন স্বামী যদি মনে করেনঃ যে আপনি অসন্তুষ্ট হলেই আপনার স্ত্রী ক্ষতির সম্মুখীন হবে! তাহলে আপনার সেই ধারণা নিতান্তই ভুল। এক্ষেত্রে শরীয়ত সম্মত ওজুর থাকতে হবে। যেমন অনেক বদমেজাজি স্বামী রয়েছেন ছোটখাটো বিষয় নিয়ে স্ত্রীর সাথে লেগে যান বা স্ত্রীর উপর অসন্তুষ্ট হয়ে বসেন। তাদের ক্ষেত্রে উক্ত হাদীসটি প্রযোজ্য হবে না বা দ্বীনি কাজে বাঁধা দিলে এই হাদিসটি প্রযোজ্য হবেনা।
মূলত আল্লাহর দৃষ্টিতে স্বামীর অসন্তুষ্টি পিছনে সুস্পষ্ট কারন থাকতে হবে এবং সেটি যদি স্ত্রী ভুলের কারণে হয় তখনই স্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত হবে বা গুনাহগার হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রত্যেকের মা বোনকে এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভুল থাকে শুধরে নেওয়ার এবং যেন সদা সতর্ক থাকার তৌফিক দান করেন আমীন।