স্মৃতিগুলো আজ অনেক দূরে

তার সাথে পরিচয় আমার গ্রুপ থেকে। বাস্তব জীবনে একা হলেও ভার্চুয়াল জগতে আমি ২০ হাজার  ফ্যান আর ৩৭ হাজার মেম্বার নিয়ে খোলা গ্রুপের এডমিন ছিলাম।

তখনই পরিচয় মেয়েটার সাথে। খুব শান্তশিষ্ট আর নিরব প্রকৃতির ছিলো মেয়েটা। তার সাথে প্রথম পরিচয় ঝগড়া দিয়ে। তার রাগ হতো কেন আমি আমার প্রতিটা গল্পে নায়ক বা নায়িকা কে মেরে দিই। কেন হ্যাপি এন্ডিং আনতে পারিনা।

তার এমন অভিযোগে হেসেছিলাম খুব আর রাগও হয়েছিলো। কিন্তু আস্তে আস্তে আমরা ভালো ফ্রেন্ড হয়ে গেলাম। আমাদের ওই সময়টা এই সময়ের মত ছিলো না। আমরা সারাদিনে লুকিয়ে লুকিয়ে 5 মিনিট কথা বলে যে সুখ পাইতাম সে সুখ যেন কোনো কিছুতে পাওয়া যায়না।

তার জন্য অনেকটা সাত সাগর পাড়ি দেবার মত করে বাসায় ফাকি দিয়ে, অনেক বাধা পার করে প্রিয় মানুষ কে ২ মিনিট দেখা টাই ছিলো যেন লাইফের শ্রেষ্ঠ সময়।

চলুন এবার গল্পে ফেরা যাক।

এভাবেই কেটে গেলো আমাদের ১ বছরের ফ্রেন্ডশিপ। ততদিনে আমি তার দিকে কিছুটা ঝুকে পড়েছি, হয়তোবা ভালোবেসে ফেলেছি বা অন্যকিছু। কিন্তু আমি কোনোদিন তাকে বুঝতে দিইনি। কারণ বলে দিলেই তো প্রেমটা নষ্ট হয়ে যায়। তবে হ্যা, এই কারণ ছাড়াও আরেকটা কারণ রয়েছে সেটা হলো বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়া। যেটা কোনোদিন আমি চাইনি।

সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিলো। হঠাত ঘটলো বিপত্তি।

কোনো এক ছেলে তাকে ভালোবাসতো। যেটা আমি জানতাম না। এমনই এক দিন

-নিরব,

-হুম

-একটা কথা বলি?

-হুম বলো।

-আমাকে একটা ছেলে আমাকে প্রতিনিয়ত ডিস্টার্ব করে। আমার জন্য হাতও কেটেছে। ওর থেকে রেহায় পাবো কি করে? আমাকে হেল্প করতে পারবা?

-কি হেল্প?

-এর সলুশন দাও

(আমিও ভেবে দেখলাম ছেলেটা যখন হাত কেটেছে হয়তো সে সত্যিই ভালোবাসে। হয়তো তার ভালোবাসা আমার থেকেও গভীর। আমিও বলে দিলাম –

-ও তোমাকে সত্যিই ভালোবাসে তাই হয়তো পাগলামি করছে

– আমি জানি না। এখন আমি কি করবো তাই বলো

-এক্সেপ্ট করে নাও

(ব্যস, একটা সম্পর্কে ৩য় ব্যাক্তি ঢুকলে যা হয় তাই-ই হলো। তার বয়ফ্রেন্ড আমাকে ফোন দিয়ে বলে (আলো-ছদ্মনাম) নাকি আমার উপর বিরক্ত। সে আমার সাথে কন্ট্যাক্ট রাখতে চায় না। আমিও একবুক অভিমান নিয়ে তাকে ফেসবুকে ব্লক দিয়ে দিলাম।

তার সাথে কথা হয়না এক দিন,দুই দিন, তিন দিন … … …

এভাবেই মাস কয়েক। অবশ্য তার ফ্রেন্ডের থেকে ঠিকই খোজ নিতাম। রেগুলার।

সে গ্রুপে পোস্ট দিলো, “নিরব প্লিজ ফিরে এসো।”

কি ভেবে ব্লক থেকে আনব্লক করলাম। সাথে সাথে মেসেজ

-কিভাবে পারলে তুমি ব্লক দিতে? একটুও কি কষ্ট হয়নি?

নাকি সেই অধিকার আমি এখনও পায়নি?

-কেন আপনি না আমার উপর বিরক্ত?

-কে বললো?

-সাগর (তার বিএফ এর ছদ্মনাম)

-বিশ্বাষ করো এমন কোনো দিন আমি বলিনি। ও প্রচুর মিথ্যা বলে ওর সাথে ব্রেকাপ অনেক আগেই হয়ে গেছে। ও ভাবে তোমার সাথে আমার রিলেশন। অথচ নিজেই অনেক গুলা রিলেশন করে। শুধু তোমার কথায় রাজী হয়েছিলাম। মন থেকে মেনে নিই নি। নিতে পারিনি। তখনও না , এখনও না।

-আচ্ছা স্যরি

(রাগ তখনও কমেনি আমার, জাস্ট ফর্মালিটিসের সাথেই বললাম । হঠাৎ ফুপিয়ে কেদে উঠলো মেয়ে টা। আমিও আর নিজেকে সংযত করতে পারলাম না। যত রাগ, অভিমান ছিলো সব মুছে ফেললাম। ফ্রেন্ডশিপ ঠিকঠাক আগের মত)

একদিন

আমি- আলো , আজ একটু নেটে আইসো তো দরকার আছে।

আলো- কয়টায়?

-রাত ৯ টায়?

-আচ্ছা

(তারপর একসপ্তাহ তার খবর নেই। রাগে, অপমানে, দুঃখে ওর ফ্রেন্ড থেকে খোজ নেওয়া অফ করে দিলাম। উদ্দেশ্য- একা থাকবো। এর পর যখন সে নেটে আসে তুমুল আকারের ঝগড়া লেগে যায়। এরপর টোটালি ব্লক।

ব্লকের আগে সে আমায় বলেছিলো, আমার হাসিমুখের কারণ তুমি। তুমি কোনোদিন আমাকে কাদাবে ভাবতেও পারিনি। পুরো জীবনটা বন্ধুত্বছাড়া কাটিয়েছি। তুমি,শিমা (তার ফ্রেন্ডের ছদ্মনাম) ছাড়া আমার সাথে কেও মিশতেও চায়না। যখন সব কষ্টগুলো একসাথে জড়ো হতো তখনই ছুটে আসতাম তোমার কাছে আর তুমি মন ভালো করে দিতে। আর আজ সেই তুমিই আমাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছো।

 

১১-ই জানুয়ারি, ২০১৬।

শিমা আমাকে ফোন দেয় ভাইয়া একটু দ্রুত আসেন কথা ছিলো আপনার সাথে।

আমি তাড়াহুরো করে বেরিয়ে পড়ি। আমার পাশ দিয়ে অনেক মানুষ চলে যাচ্ছে তাও আমার মাথায় নাই কি হতে পারে।

শিমা আমাকে ডেকে বললো ভাইয়া, আলো কে মাত্র নিয়ে গেলো

-মানে

-লোকজন আছে যান, গেলেই বুঝতে পারবেন। এসে ফোন দিয়েন।

(হঠাৎ লোকজনের মুখে আলো নাম শুনতে পেলাম। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।

নিজের হাতে প্রিয়মানুষ কে মাটি দেওয়া যে কতটা যন্ত্রণাদায়ক সেদিন উপলব্ধি করলাম।

শিমার সাথে কথা বলার মুড ছিলো না। কিন্তু তবুও ফোন দিলাম। ও আসলো।

সব খুলে বললো, আলোর ব্লাড ক্যান্সার যেখানে আমাকে সামান্যতম ইনফর্মও করা হয়নি।

শিমা- আচ্ছা ভাইয়া আপনাদের ফ্রেন্ডশিপ কত বছরের?

আমি- প্রায় ১.৫ বছর কেন?

-যদি তাই-ই হয় ওর মনের কথা আপনি জানতেন না?

-কি মনের কথা?

-ও আপনাকে ভালোবাসতো। কিন্তু ও কে বোঝার ট্রাই-ই করেন নি আপনি। শুধু ঝগড়া আর ব্লক করলেই হয় না। মানুষের ভেতরের কথাগুলোও বুঝতে হয়

-হয়তো

(চলে আসছি, চোখে অশ্রুযুক্ত আঁখি,মুখে নাটকীয় হাসি। )

হয়তো তাকে ভালোবাসতে পারিনি, কাছে টেনে নিতে পারিনি কিন্তু সারাজীবন তার স্মৃতি তো ধরে রাখতে পারবো।

আফসোস থেকে যাবে একটাই,  তাকে শেষবারের মত দেখতেও পারলাম না।

Leave a Comment