ডিপ্রেশন বলতে আমরা কি বুঝি? যেকোনো সময় যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আমাদের মন খারাপ করে দেয়। এটি খুব স্বাভাবিক। কিন্তু এই মন খারাপের মাত্রা কিংবা স্থায়িত্ব যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন সেটিকে বলে ডিপ্রেশন।
২০১৮ সালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জরিপ অনুসারে, বাংলাদেশে বর্তমানে ডিপ্রেশনে আক্রান্ত রোগীর হার শতকরা ৬.৭ শতাংশ। একজন মানুষকে শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে বিকলাঙ্গ করে দিতে সক্ষম বিশ্বব্যাপী এরকম সব অসুখের তালিকার মধ্যে ডিপ্রেশনের স্থান চতুর্থ। শুধু মানসিক রোগের তালিকার মধ্যে ডিপ্রেশনের অবস্থান প্রথম।
তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে এই ডিপ্রেশন নিয়ে মানুষের ভুল ধারণা অনেক বেশি। একটু মন খারাপ হলেই আমরা তাকে ডিপ্রেশন নাম দিয়ে বসে থাকি। কিন্তু ডিপ্রেশন মানে শুধুই মন খারাআপ নয়। মন খারাপের সাথে কী কী বিষয় থাকলে কিংবা মন খারাপটাই ঠিক কতটুকু মাত্রায় থাকলে আমরা তাকে ডিপ্রেশন বলব? চলুন জেনে নেওয়ার চেষ্টা করি।
ডিপ্রেশনে বা বিশ্বণ্ণতার বিষয়ে সবার সুস্পষ্ট ধারণা থাকা আবশ্যক। কারণ ডিপ্রেশন সম্পর্কিত প্রচলিত ভুল ধারণাগুলোর একটি হচ্ছে- ডিপ্রেশন হতে হলে তার পেছনে অবশ্যই কোনো না কোনো কারণ থাকতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ নেই, এমন কোনো মানুষ যদি ডিপ্রেশনের কথা বলেন, আমরা তার সমস্যাকে হেসেই উড়িয়ে দেই। ফলাফল, এ মানুষগুলো সঠিক চিকিৎসার অভাবে দিনের পর দিন মানসিক কষ্ট নিয়ে ঘুরে বেড়ান।
চলুন জেনে নিই ডিপ্রেশনের কিছু লক্ষণঃ
* কারোর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে না হওয়া। বন্ধু বা পরিবার হোক, সকলকে এড়িয়ে নিজে একা থাকতে শুরু করা।
* কথায় কথায় কান্না পাওয়া। অতীতের ছোট বড় কথা মনে করে রাত দিন কান্নায় ভেঙে পড়া। অল্পতেই কষ্ট হওয়া।
* কাজের প্রতি চরম অনিহা। নিজেকে মূল স্রোত থেকে সরিয়ে নেওয়া। সারা দিন কোনও লক্ষ্য ছাড়া কাটিয়ে দেওয়া।
* খেতে ভালো না লাগা। বশেষ করে নিজের প্রতি ভালোবাসা কমতে থাকা। দূরে সরে যেতে থাকা বাস্তব থেকে।
* আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া। সব বিষয়ে পিছিয়ে পড়া। আমি পারব না এই চিন্তা নিজের মনে ঢুকিয়ে নেওয়া ও বিশ্বাস করা।
* একাকিত্ব গ্রাস করে এই পর্যায়ে অনেককে। এক নিজেকে ঘরে বন্দি করে ফেলা। দীর্ঘক্ষণ একা একা থাকা, পাশাপাশি সামাজিক জীবন থেকে সরে যাওয়া।
* প্রায় জিনিসগুলোর প্রতি আনন্দ না আসা। সব সময় হেরে যাওয়া মনভাব। নেগিটিভিটি ঘিরে ধরে এই পর্যায়। কথায় কথায় বিরক্ত হওয়া।
* ডিপ্রেশন চরম পর্যায়ে পোঁছে গেলে মানুষ জীবন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করে। নতুন উদ্যেগে কিছু শুরু করার ইচ্ছা চলে যায় ভেতর থেকে।
* কথায় কথায় রেগে যাওয়া। কেউ ভালো কথা বললেও তা যেন শুনতে না চাওয়া, একটা বড় লক্ষণ।
* ঘুমের সমস্যা হওয়া রাতে ভয় পাওয়া বা একা থাকতে সমস্যা হওয়া।
মূলত এগুলো হচ্ছে ডিপ্রেশনের কারণে জন্ম নেওয়া চরম সমস্যা।
ডিপ্রেশনের রোগিদের নিয়ে হাসি তামাশা না করে তাদের মানসিক সাপোর্ট দিন, প্র্যোজনে ডক্টরের পরামর্শ নিন। হয়তো আপনার একটু সাপোর্ট তাকে তার স্বাভাবিক জীবনযাপনে সহায়তা করবে।