“মনোযোগ বাড়ানোর উপায়” – এ কথাটি শুনলে অনেকেই মনে করেন মনোযোগ বাড়াতে বোধহয় সারাদিন কাজ করতে হয়, অথবা একটানা পড়াশোনা করতে হয়। কিন্তু বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন। কিভাবে? বলছি!
তার আগে একটি প্রশ্ন করি। আপনি কোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে চান। কিন্তু কাজের প্রতি পর্যাপ্ত মনোযোগের অভাবে সে কাজটি ঠিক মতো করে হয়ে ওঠা উঠছে না – এমনকি কখনো হয়েছে আপনার সাথে? এ প্রশ্নটির জবাবে বেশিরভাগ মানুষই কিন্তু হ্যাঁ বলবে। আমরা প্রতিদিনের চলার পথে নিজেদের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করি যেন প্রতিটি কাজ সঠিকভাবে মন দিয়ে করতে পারি।
কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়,চাইলেও কেন যেন কাজের প্রতি মনোযোগটা ঠিক আসেনা৷ আর একারণে যে কতশত মানুষ নিজেদের পড়াশোনা বা কাজের জায়গায় প্রতিদিন স্ট্রাগল করছেন সে সংখ্যা হাতে গুণে শেষ করে যাবেনা৷ একটি কথা না বললেই নয়, কাজের প্রতি মনোযোগ না থাকলে সেই কাজে সফলতা পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। আর একারণেই মনোযোগ বাড়ানোর উপায় গুলো সম্পর্কে সবার জেনে রাখা উচিত। তাই আজকের এই লেখায় আমি শেয়ার করব মনোযোগ বাড়ানোর উপায় গুলো সম্পর্কে, যেগুলো সম্পর্কে জানলে নিজের কাজ হোক কিংবা পড়াশোনা -কোন কাজে মনোযোগ বাড়ানো নিয়ে আপনাকে আর চিন্তা করতে হবে না।
প্রতিটি কাজ মনোযোগ দিয়ে করার গুরুত্ব কতটুকু?
মনোযোগ বাড়ানোর উপায় তো জানাবোই। তার আগে চলুন জানার চেষ্টা করি মনোযোগ দিয়ে কাজ করা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ। সত্যি বলতে আমাদের জীবনে কাজের যেন শেষ নেই। দিনের শুরু থেকে শেষ – প্রতিনিয়তই আমরা ব্যস্ত থাকি বিভিন্ন কাজে। এক্ষেত্রে যে কথাটি না বললেই নয় সেটি হলো যতই ব্যস্ততা থাকুকনা কেন,পড়াশোনা, ঘরের কাজ, চাকরিবাকরি, ব্যবসাসহ ছোট-বড় প্রত্যেকটি কাজই মনোযোগের সাথে করা উচিৎ। এর কারণ হলো যখন আপনি কোনো কাজে প্রয়োজনের চাইতে একটু কম মনোযোগ দেবেন, তখন দেখবেন সহজ একটি কাজকে কেমন যেন কঠিন লাগছে। পাশাপাশি দেখবেন কাজের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হতে থাকবে, এই অনীহার ফলে সময়ের কাজ সময়ে তো করতে পারবেইননা, বরং দেখবেন দিনশেষে মাথার ওপর কাজের পাহাড় জমে গেছে।
অনেকে মনে করেন, সারাদিন কাজ করলেই বুঝি সফলতা হাতের মুঠোয় চলে আসে। কিন্তু বলুন তো, কাজে যদি মনই না থাকে, তাহলে সেই কাজে সারাদিন ব্যয় করা কি অর্থহীন নয়? আসলে প্রতিটি কাজে সফল হতে হলে পরিশ্রমের পাশাপাশি কাজের প্রতি মনোযোগী হওয়া ও ডেডিকেশন দেখানোও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের আমি দিনের চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করতে বলছিনা, শুধু বলছি যতক্ষণই কাজ করুননা কেন, সেটিতে যেন মনোযোগের একবিন্দুও ঘাটতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা আবশ্যক। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন জীবনে যারা সফল হয়েছেন, তারা সবসময় চেষ্টা করতেন পূর্ণ মনোযোগের সাথে কাজ করতে৷ কেননা, মনোযোগ দিয়ে কাজ করলে –
- সময়ের কাজ সময়ে শেষ করা যায়।
- কাজের প্রতি অনীহা জন্মায়না।
- নতুন কিছু শেখার আগ্রহ জন্মায়।
- সর্বোপরি সফল হওয়া যায়৷
তাই বলা যায়, একটি কাজ খুব ছোট হোক কিংবা বিশাল বড় হোক – সেটি মনোযোগ দিয়ে করার গুরুত্ব অপরিসীম।
যেকোনো কাজে মনোযোগ বাড়ানোর উপায় গুলো জানুন
আমি জানি মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে ছোট-বড় সবাই চান। এ মনোযোগ বাড়ানোর অনেক উপায় থাকলেও সবগুলো উপায় বিজ্ঞানসম্মত ভাবে কার্যকর নয়। তাহলে কোন উপায় গুলো অনুসরণ করবেন? এখন আমি জানাবো মনোযোগ বাড়ানোর উপায় সম্পর্কে যেগুলো অনুসরণ করলে ধীরে ধীরে দেখবেন কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়বে।
০১। নিজের ইচ্ছাশক্তি থাকা
বলা হয়ে থাকে, ইচ্ছা থাকলে নাকি উপায় হয়। সত্যিই তাই! যদি আপনার ইচ্ছাশক্তি থেকে থাকে তাহলে আপনি অসাধ্য সাধনও করতে পারবেন। একারণেই মনোযোগ বাড়ানোর উপায় হিসেবে আমি প্রথমেই বলব নিজের ইচ্ছা শক্তি থাকা। কারণ যখন নিজে মন থেকে চাইবেন যে আপনার কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়ুক, তাহলে দেখবেন মনোযোগ বিঘ্ন হওয়ার মতো যাই ঘটুকনা কেন, কখনোই আপনার মনোযোগ কমবেনা।
০২। কাজের ফাঁকে বিরতি নেয়া
যখন কেউ একটানা কাজ করতে থাকেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই ক্লান্তি আসে। এই ক্লান্তি আসার ফলেই কিন্তু মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে। তাই মনোযোগ বাড়াতে চাইলে কখনোই একটানা অনেকক্ষণ কাজ করা যাবে না। বরং কাজ করার মাঝখানে কিছুক্ষণ বিরতি নিতে হবে। যেমন কোন একটি কাজ টানা চার ঘন্টা ধরে করার চাইতে আপনি যদি প্রতি দুই ঘণ্টা কাজ করার পর ১৫ মিনিট করে বিরতি নেন, তাহলে দেখবেন কাজের প্রতি যেমন অতটা ক্লান্তি আসছে না, তেমনি পুরোটুকু সময় মনোযোগের সাথে কাজটি করতে পারছেন।
আরো পড়ুনঃ ড্রপশিপিং বিজনেস কি? কিভাবে ড্রপশিপিং বিজনেস শুরু করবেন? ড্রপশিপিং বিজনেস সাকসেসফুল করার টিপস
০৩। কাজের লিস্ট মেইনটেইন করা এবং একসাথে সব কাজ না করা
কাজে মনোযোগ বাড়াতে চাইলে কী কী কাজ করতে হবে সেটির একটি লিস্ট তৈরি করুন। এরপর সেই লিস্ট ফলো করে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে একটি একটি করে কাজগুলো শেষ করুন। চেষ্টা করুন যতটুকু পারেন গুছিয়ে কাজগুলো করতে। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন, কখনোই একসাথে অনেকগুলো কাজ করতে যাবেননা। কারণ এটি করলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যেতে শুরু করে, যার ফলে কোনো কাজেই মনোযোগ ধরে রাখা যায়না। তাই যে কাজটি করতে শুরু করবেন সেটি আগে শেষ করে পরবর্তী কাজটি শুরু করুন।
০৪। সোশ্যাল মিডিয়া কম ব্যবহার করা
আজকালকার দিনে হাতে থাকা স্মার্টফোনে সবাই বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেন। আপনারা হয়তো জানলে অবাক হবেন, অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করলে নিজের পড়াশোনা ও কাজের প্রতি মনোযোগ কমে যায়। তাই মনোযোগ বাড়াতে সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার পরিহার করা অত্যাবশ্যক। আমি সাজেশন হিসেবে বলবো প্রতিদিনের একটি নির্দিষ্ট সময় বেছে নিন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের জন্য। এতে করে দেখবেন অনেক সময় বেঁচে যাচ্ছে এবং এ সময়ে অন্যান্য কাজে সহজেই মনোনিবেশ করতে পারছেন।
০৫। পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম
প্রতিদিন বিভিন্ন রকম কাজ করতে করতে আমাদের মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। যখন মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন কিন্তু চাইলেও কোনো কাজে মনোযোগ দেয়া সম্ভব হয় না। যেমন ধরুন, আপনি যদি পুরো রাত না ঘুমিয়ে পরেরদিন ক্লাসে উপস্থিত হন তাহলে দেখবেন চাইলেও আপনি আপনার শিক্ষকের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে পারবেন না। এর কারণ হলো বিশ্রামের অভাবে আপনার মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, নিজের মনোযোগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রামের ভূমিকা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ। তাই কখনোই অধিক রাত পর্যন্ত জেগে থাকবেননা। পাশাপাশি দিনের অন্যান্য সময়ে সুযোগ করে বিশ্রাম নিন। দেখবেন এতে করে যে কাজই করতে যাননা কেন, মনোযোগের অভাব কখনোই হবেনা।
০৬।পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ ও নিয়মিত শরীরচর্চা করা
মনোযোগ বাড়ানোর উপায় হিসেবে অত্যন্ত কার্যকর একটি উপায় হলো পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা। বাইরের খাবার, জাংকফুড, ফাস্টফুড, কোল্ড ড্রিংকস ইত্যাদি কম পরিমাণে খান। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় বিভিন্ন ধরণের মাছ, শাকসবজি, বাদাম, দুধ ইত্যাদি রাখুন। এসব পুষ্টিকর খাদ্য মস্তিষ্ককে কর্মক্ষম রাখে, যা মনোযোগ বাড়ায়।
পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা করার অভ্যাসটি গড়ে তুলুন। খুব ভারি ব্যায়াম নয়, বরং হালকা ধরণের ব্যায়াম বা ভার উত্তোলন করতে পারেন। আবার চাইলে মেডিটেশনও করতে পারেন। এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলোই দীর্ঘসময় কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে সহায়তা করে।
এটুকুই ছিলো যেকোনো কাজে মনোযোগ বাড়ানোর উপায় নিয়ে আজকের আলোচনা। আশা করি আপনারা এই উপায়গুলো অনুসরণ করবেন এবং মনোযোগ দিয়ে ছোট-বড় প্রতিটি কাজ করবেন।