আপনি কি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার নিয়ম জানতে চান? তাহলে আজকের এই লেখাটি অবশ্যই আপনার উপকারে আসবে।
আমাদের দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করে তোলার উদ্দেশ্যে সরকারের নেয়া কিছু পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম হলো দেশের সব নাগরিকের জন্ম নিবন্ধন সনদ অনলাইনের একটি আলাদা সার্ভারে সংরক্ষণ করা। বর্তমানে নতুন ও পুরাতন সব ধরণের জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে লিপিবদ্ধ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
সত্যি বলতে এই জন্ম নিবন্ধন এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট যেটি আপনার জীবনের বিভিন্নক্ষেত্রে কাজে লাগে। যেমন ধরুনঃ ভোটার আইডি কার্ড কিংবা পাসপোর্টের জন্য অ্যাপ্লাই করতে, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে কিংবা চাকুরীর ক্ষেত্রে নিজের বয়স প্রমাণ করতে। আর এখন কমবেশি সবখানেই জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন কপি জমা দিতে বলা হয়। তাই আপনার জন্ম নিবন্ধন অনলাইন পোর্টালে অ্যাভেইলেবল রয়েছে কিনা তা যাচাই করা খুবই জরুরি।
অনেকেই জিজ্ঞেস করেন, মোবাইলে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করা যায় কিনা কিংবা যাচাই করতে কোনো বাড়তি ফী দিতে হয় কিনা ইত্যাদি। সবার সব কনফিউশান দূর করতে আজকের লেখায় আপনাদের জানাবো সঠিকভাবে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার নিয়ম সম্পর্কে।
জন্ম নিবন্ধন কি ?
যাদের জন্ম নিবন্ধন নিয়ে সেভাবে ধারণা নেই, তাদের জন্য শুরুতেই জন্ম নিবন্ধন সম্পর্কে কিছু তথ্য দিচ্ছি। জন্ম নিবন্ধন কিংবা জন্ম সনদ ইংরেজিতে বার্থ সার্টিফিকেট (Birth Certificate) নামে পরিচিত । এই সনদে একজন মানুষের পুরো নাম, জন্ম তারিখ, পিতা মাতার নাম, ঠিকানা ইত্যাদি উল্লেখ থাকে।
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনো রাষ্ট্রের অধীনে বসবাস করে। সাধারণত কোনো দেশে জন্মের মধ্যে দিয়ে মানুষটি ওই দেশের নাগরিকত্ব অর্জন করে। আর এই নাগরিকত্ব অর্জনের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি হলো এই জন্ম নিবন্ধন। আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদ থাকার অর্থ হলো একজন নাগরিক হিসেবে আপনি রাষ্ট্রের দেওয়া সকল সুযোগ-সুবিধা খুব সহজে ভোগ করতে পারেন।
জন্ম নিবন্ধনকে আগেকার দিনে খুব একটা গুরুত্ব দেয়া হতোনা। তারপর ২০০৪ সালে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন পাসের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন থাকা বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়।
জন্ম নিবন্ধন করবেন কিভাবে?
জন্ম নিবন্ধন করা খুবই সহজ। এখন জন্ম নিবন্ধন করতে গেলে অনলাইনের এই লিংকে প্রবেশ করে একটি ফর্ম পূরণের মাধ্যমে অ্যাপ্লাই করতে হয়। এই ফর্মে নিজের সব ব্যক্তিগত তথ্য সঠিকভাবে লিখে ও নিজের স্বাক্ষর করে ফর্মটি প্রিন্ট করতে হয়৷ তারপর নির্দিষ্ট পরিমান ফী দিয়ে নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদ, , পৌরসভা কিংবা সিটি কর্পোরেশন অফিসে ফর্ম জমা দিতে হয়। তারপর সেখান থেকেই প্রথমে জন্ম নিবন্ধনের হার্ড কপি দেয়া হয় এবং এই নিবন্ধন অনলাইনের সার্ভারেও সংরক্ষিত থাকে।
জন্ম নিবন্ধনের প্রয়োজনীয়তা
বাংলাদেশে বসবাররত প্রতিটি নাগরিকের জন্য জন্ম নিবন্ধন কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আসলে অল্প কথায় বলে বোঝানো কঠিন। এটি এমন একটি ডকুমেন্ট যেটি বিভিন্ন ক্ষেত্রেই প্রয়োজন হয়। যেমনঃ প্রাপ্ত বয়স্ক হবার পর যখন ভোটার হতে যাবেন, তখন জাতীয় পরিচয় পত্র পাওয়ার জন্য আবেদন করতে গেলেও আপনার জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপির প্রয়োজন পড়বে। এছাড়া বিয়ের কাবিননামাতে ,ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করতে, ভোটার আইডি কার্ড হাতে পেতে, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতেও জন্ম নিবন্ধন থাকা প্রয়োজন।
এর পাশাপাশি সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরির আবেদন করতে,জমি রেজিস্ট্রেশন করতে, টিআইএন বা ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার পেতে কিংবা ট্রেড লাইসেন্স পেতেও এই জন্ম নিবন্ধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জেনে রাখা ভালো, এগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভেরিফিকেশনের কাজে জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন কপি জমা দিতে হয়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার নিয়ম জানা থাকা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ।
শুধুমাত্র আপনারই যে এই জন্ম সনদ থাকা প্রয়োজন ব্যাপারটি এমন নয়, বরং আপনার সন্তানকে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে চাইলেও সেখানে প্রথমেই আপনার সন্তানের বয়স প্রমাণের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ জমা দিতে বলা হবে। আবার আপনি পরিবার নিয়ে যদি দেশের বাইরে ঘুরতে অথবা কোনো জরুরি কাজে যান সেখানেও আপনার এবং আপনার পরিবারের প্রতিটি সদস্যের জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন পড়বে পাসপোর্ট ইস্যু করার কাজে । সুতরাং বুঝতেই পারছেন, এই এক পৃষ্ঠার কাগজটি কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ!
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার নিয়মঃ
- অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার সময় আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদটি অবশ্যই হাতের কাছে রাখতে হবে। কারণ জন্ম সনদে থাকা ১৭ ডিজিটের রেজিস্ট্রেশন নাম্বারটি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার সময় প্রয়োজন হয়। সনদ যাচাই করার জন্য শুরুতে সরকারের অনুমোদিত যে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট আছে সেটিতে প্রবেশ করতে হবে। ওয়েবসাইটের লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
- ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশের পর প্রথমে দুটি বক্স দেখতে পারবেন, যেখানে আপনাকে আপনার জন্ম সনদে থাকা ১৭ ডিজিটের নিবন্ধন নম্বর এবং জন্ম নিবন্ধনে উল্লেখিত জন্ম তারিখ পূরণ করতে হবে। তবে জেনে রাখা ভালো , এই ইউনিক সনদ নিবন্ধন নাম্বারটি কোনো কোনো জন্ম সনদে পরিচিতি নং বা পার্সোনাল আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার হিসেবেও থাকতে পারে।
- ওপরের এই তথ্যগুলো প্রদানের পর একটি ছোট্ট ম্যাথ করতে দেয়া হবে। এটি আসলে একটি ক্যাপচা যেটির মাধ্যমে আপনি রোবট কিনা তা যাচাই করা হয়। ক্যাপচাটি সমাধান করে এর ফলাফল শেষের বক্সে ইনপুট করে সার্চ বাটনে ক্লিক করতে হবে। নিজের নিবন্ধন নম্বর ও জন্ম তারিখ সঠিকভাবে দেওয়া হয়ে থাকলে পরবর্তী ওয়েবপেজে জন্ম নিবন্ধনের তথ্যগুলো প্রদর্শিত হবে।
- এবার স্ক্রিনে প্রদর্শিত জন্ম নিবন্ধনের এই তথ্যগুলো খুব সহজে যাচাই করে নিতে পারবেন আপনার পূর্বে প্রদান করা নিবন্ধনের তথ্য গুলোর সাথে।
- তবে সার্চ বাটনে ক্লিক করার পর যদি নতুন কোন ওয়েব পেজ না আসে অথবা রেকর্ড নট ফাউন্ড (Record Not Found ) এই লেখা আসে, তাহলে বুঝতে হবে সেই নিবন্ধনকারীর কোনো তথ্য অনলাইনের সার্ভারে নেই। তখন সেই ব্যক্তিকে পুনরায় তাঁর জন্ম নিবন্ধনের তথ্য গুলো অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে আপডেট করতে হবে।
Read More:
ই সিম কি? ই সিমের সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে জানুন এখনই! 2023
জন্ম নিবন্ধন ডাউনলোড ও প্রিন্ট করার নিয়ম
- আপনার যাচাই করা অনলাইন জন্ম নিবন্ধনটি প্রিন্ট করার জন্য আপনার ওয়েব ব্রাউজারের মেনু নামক বাটনে ক্লিক করার পর প্রিন্ট অপশনটি সিলেক্ট করতে হবে। এর পাশাপাশি শর্টকাটে Ctrl + P প্রেস করলেও সরাসরি প্রিন্ট অপশনটি আপনার স্ক্রিনে চলে আসবে ।
- এরপর আপনার কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ কোনো একটি প্রিন্টার মেশিনের সাথে যুক্ত করে স্ক্রিনে প্রিন্ট বাটনে ক্লিক করার মাধ্যমে আপনার জন্ম সনদটি সহজে প্রিন্ট করে নিতে পারবেন।
- আপনি যদি জন্ম নিবন্ধন বা জন্ম সনদটির অনলাইন কপি আপনার কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপে ডাউনলোড করে রাখতে চান, তাহলে শুরুতে Ctrl+P বাটন দুটোতে প্রেস করে স্ক্রিনে আসা নতুন ওয়েবপেজটির ডেস্টিনেশন (Destination) অপশনটির পাশে থাকা তালিকা ওপেন করতে হবে এবং সেখানে save as pdf লেখা অপশনটি ক্লিক করতে হবে। তারপর সেভ বাটনটিতে ক্লিক করলে আপনার জন্ম সনদ ডাউনলোড হওয়া শুরু করবে।
- ডাউনলোড প্রক্রিয়াটি শেষ হওয়ার পর আপনার কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপের Downloads থেকে ফাইলটি খুঁজে বের করতে পারবেন ।
এটিই হলো ল্যাপটপ বা মোবাইলে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার নিয়ম।
Frequently Asked Questions
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার নিয়ম সম্পর্কে আপনাদের কিছু ছোট ছোট জিজ্ঞাসা বা কনফিউশন থাকতে পারে যা নিচে আমি ক্লিয়ার করে দিচ্ছিঃ
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে কি কি প্রয়োজন?
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে আপনার প্রয়োজন হবে আপনার ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন নম্বর এবং ইন্টারনেট কানেকশন রয়েছে এমন একটি ডিভাইস। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যাচাই করা হয় বলে আপনারা পিসি, ল্যাপটপের পাশাপাশি মোবাইলে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে পারবেন খুব সহজে।
সবাই কি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে পারবেন?
জন্ম নিবন্ধনের তথ্য অনলাইনে আপডেট করা থাকলে ছোট-বড় যে কোন বয়সের নারী পুরুষই অনলাইন থেকে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে পারবেন।
জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন কপি কি সব কাজে ব্যবহার করা যায়?
সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের কাজেই আপনি অনলাইন থেকে প্রিন্ট করা জন্ম নিবন্ধন ব্যবহার করতে পারবেন তবে কোন স্থানে যদি জন্ম নিবন্ধনের মূলকপি দেখতে চায় তখন আপনাকে মূলকপি ব্যবহার করতে হবে।
ল্যাপটপ বা মোবাইলে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে কি ফী লাগে?
জন্ম নিবন্ধন যাচাইয়ের পুরো প্রক্রিয়াটিই আপনারা বাড়িতে বসে একদম বিনামূল্যে সম্পন্ন করতে পারবেন। তবে যদি দোকানে গিয়ে এটি প্রিন্ট করতে চান, সেক্ষেত্রে প্রিন্টের খরচটুকু দিতে হবে।
জন্ম নিবন্ধন নম্বর না জানলে কি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করা যায়?
আপনার জন্ম সনদের নিবন্ধন নম্বরটি জানা না থাকলে কোনো ভাবেই অনলাইন থেকে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আপনাকে আপনার নিকটস্থ সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা অথবা ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে হবে।
জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে আসেনি, তাহলে কি করবো?
সাধারণত যাদের জন্ম নিবন্ধন অনেক আগে করা হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন না হওয়ার ঘটনাটি ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে আপনাকে আবার নতুন করে জন্ম নিবন্ধন করতে হবে।
পরিশেষে, আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার নিয়ম সম্পর্কে সবাই পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন ।তাই দেরি না করে আজই অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করে নিন।
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ঘুরে আসুন আমাদের ফেসবুক পেইজ থেকে