প্রয়োজনের তুলনায় বেশি, অনিয়মিত খাওয়া-দাওয়া, অতিরিক্ত ভাজা পোড়া অথবা বেশি মশলা যুক্ত খাবার খাওয়া ছাড়াও পাশাপাশি আরও অন্যান্য কারণে কম বেশি আমরা গ্যাস্ত্রিকের সমস্যায় কষ্ট পাই। তবে সমস্যা ক্রনিক হয়ে গেলে তখন কষ্টের পরিমাণ একটু বেশি হয়ে যায়।তখন ঔষধ ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় যারা ভোগেন একমাত্র তারাই বলতে পারেন এটা কতটা কষ্টকর। আর তখনই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সবাই হাত বাড়ান ওষুধের দিকে। এতে সাময়িক কিছুটা উপশম পাওয়া গেলেও আসলেই ক্ষতিকর একটি অভ্যাস এটি।
তবে চিকিৎসকদের মতে, শারীরিক প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘন ঘন অ্যাসিড কমানোর ওষুধ খেলে তা শরীরের ক্ষতিই করে যেমন শরীরের হাড় ক্ষয়ে যেতে পারে।এর প্রভাবে কোনো ভারী খাবার খেলে অ্যাসিডের অভাবে প্রোটিন হজমে বিঘ্ন ঘটে। এছাড়াও খাবার নিচে নামার প্রক্রিয়া শ্লথ হয়ে পেট ভার, খাবার গলায় উঠে আসা, টক ঢেকুর, বমি ও বদহজমসহ নানা সমস্যা দেখা মিলে।
তবে সঠিকভাবে জীবন যাপন করলে গ্যাস্ট্রিক থেকে অনেক দূরে থাকা যায়।কিন্তু ওষুধ ছাড়াও ঘরোয়া টোটকা দিয়ে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করা যায়। তাহলে চলুন এবার জেনে নিন ওষুধ ছাড়া কীভাবে গ্যাস্ট্রিক দূর করবেন-
দইঃ দই অমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। যার ফলে পেটে গ্যাস হওয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। প্রতিদিন অন্তত ৩০-৬০ গ্রাম টক দই খাওয়ার চেষ্টা করুন।দিনের বেলাতে খাওয়া ভাল যেহেতু অনেকের ঠান্ডা বা কফ জনিত সমস্যা থাকতে পারে।
পেঁপেঃপেঁপেতে রয়েছে পাপায়া নামক এনজাইম, যা হজমশক্তি বাড়ায়।নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার অভ্যাসে গ্যাসের সমস্যা কমে।
শসাঃ পেট ঠান্ডা রাখার জন্য শসা অনেক বেশি কার্যকরী খাবার।এতে রয়েছে ফ্লেভানয়েড ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা পেটে গ্যাসের উদ্রেক কমায়।
কলা ও কমলাঃ কলা ও কমলা পাকস্থলির অতিরিক্ত সোডিয়াম দূর করে সহায়তা করে। এতে করে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও কলার সুল্যবল ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর ক্ষমতা রাখে।সারাদিনে অন্তত দুটি কলা পেট পরিষ্কার রাখতে দারুন সাহায্য করে।
লবঙ্গঃ খাবার খাওয়ার পর যদি বুক জ্বালা কিংবা ঢেকুর ওঠার মতো সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে একটি বা দুটি লবঙ্গ খেয়ে নিলে উপকার পাওয়া যাবে।
জিরাঃ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার জন্য জিরা অত্যন্ত কার্যকর উপাদান। জিরাতে এসেন্সিয়াল অয়েল থাকে যা আমাদের স্যালিভারি গ্লান্ডকে স্টিমুলেট করে এবং সঠিক ভাবে হজমে সাহায্য করে।ফলে পেটে অতিরিক্ত গ্যাস ফরমেশন হয় না।এক টেবিল চামচ গোটা জিরা ২ কাপ পানিতে ১০-১৫ মিনিট মাঝারি আচে ঠান্ডা করে নিন।এরপর খাবার খাওয়ার ৩০-৪০ মিনিট পর পানিটুকু পান করুন।
মৌরিঃ মৌরিতে থাকা বিশেষ এক ধরনের তেল পাকস্থলির কর্মক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে।সেই সঙ্গে হজমে সহায়ক পাচক রসের ক্ষরণ এতটা বাড়িয়ে দেয় যে বদ-হজম এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্সের মতো সমস্যা খুব দ্রুত কমে যায়। এছাড়াও মৌরি ভিজিয়ে সেই পানি খেলে উপকার পাওয়া যায়।
আদাঃ আদা সব চাইতে কার্যকারী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার। পেট ফাঁপা এবং পেটে গ্যাস হলে আদা কুচি করে লবণ দিয়ে কাঁচা খেয়ে নিন।গ্যাসের সমস্যার উপশম পাবেন।
রসুনঃ অ্যাসিডিটির সমস্যা কমাতে রসুন খুবই উপকারী। এক কোয়া রসুন খেয়ে নিলে। এক কোয়া রসুন খেয়ে নিলে স্টমাকে অ্যাসিডের ক্ষরণ ঠিক হতে শুরু করে। ফলে গ্যাস-অম্বল সংক্রান্ত নানা লক্ষণ ধীরে ধীরে কমে যায়।
ডাবের পানিঃ ডাবের পানি খেলে হজম ক্ষমতা বাড়ে এবংসব খাবার সহজেই হজম হয়ে যায়।এছাড়াও নিয়মিত ডাবের পানি খেলে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।তাই সম্ভব হলে প্রতিদিন ডাবের পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন।তাহলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
অ্যালোভেরাঃ অ্যালোভেরায় উপস্থিত নানাবিধ খনিজ একদিকে যেমন ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায় তেমনি হজম ক্ষমতার উন্নতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।অ্যালোভেরায় উপস্থিত অ্যাসিড ,স্টোমাকে তৈরি এসিডের কার্যকারীতা কমিয়ে দেয়।ফলে অ্যাসিডিটির সমস্যা একেবারে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
পুদিনা পাতার পানিঃ এক কাপ পানিতে পাঁচটা পুদিনা পাতা দিয়ে ফুটিয়ে খান। পেট ফাঁপা, বমিভাব দূর করতে সাহায্য করবে।
এছাড়াও যারা বেশিরভাগ সময়ই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাতে ভুগছেন, তারা ১-২ টি কাচা আমলকি বা ১ চা চামচ মৌরি দানা অথবা সামান্য গোল মরিচের গুড়া সামান্য লবণ দিয়ে চিবালেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। বিশেষ করে কাঁচা আমলকী গরগকালীন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে ভীষণ কার্যকর। তবে গর্ভবতী মায়েরা অবশ্যই যেকোনো উপাদান গ্রহণের পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
সুতরাং, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলেই যে ঔষধ খেতে হবে তা নয়। হাতের কাছের প্রাকৃতিক উপাদান যেমন নিরাপদ তেমনি কার্যকর। তবে গ্যাস্ট্রিক থেকে বাঁচার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেমনঃ
– সময় মত খেতে হবে
– প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসবজি এবং পানি পান করতে হবে
– অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।