ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী, নারী-পুরুষ উভয়ের চারিত্রিক পবিত্রতা অর্জনের নিমিত্তে উভয়ের মাঝে শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত যে আড়াল বা আবরণ রয়েছে তাকে পর্দা বলা হয়।
আবার কেউ কেউ বলেন, নারী তার বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ রুপলাবণ্য ও সৌর্ন্দয্য পরপুরুষের দৃষ্টি থেকে আড়ালে রাখার যে বিশেষ ব্যবস্থা ইসলাম প্রণয়ন করেছে তাকে পর্দা বলা হয়।
মূলত হিজাব বা পর্দা অর্থ শুধু পোশাকের আবরণই নয়, বরং সামগ্রিক একটি সমাজ ব্যবস্থা, যাতে নারী-পুরুষের মধ্যে অপবিত্র ও অবৈধ সম্পর্ক এবং নারীর প্রতি পুরুষের অত্যাচারী আচরণ রোধের বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে।
নারীদের বোরখা বাড়ছে কিন্তু পর্দা বাড়েনি, বোরখার নামে চলছে আধুনিকতা! অনেকেই পর্দা বলতে বুঝে শুধু শরীর ঢেকে রাখা। ঢেকে তো অনেক ভাবেই রাখা যায়। সালোয়ার কামিজ পরেও সতর ঢাকা যায় তবে সেটা পর্দা হয় না। এভাবে চললেও, এভাবে ঢেকে রেখেও জাহান্নামী হয়ে যাবে। আখিরাতে বসনহীনা নারী হিসেবে পরিচিত হবে।
পর্দা বললে প্রথমেই পোষাকের কথা আসে। কিন্তু আজকাল পর্দার পোষাক হিসেবে ব্যবহৃত বোরকা, ওড়না বা চাদর, খিমার ইত্যাদি যেগুলো ফ্যাশানের অংশ হয়ে গেছে।
যেসব পোশাকে রয়েছে নিত্য-নতুন ডিজাইনের কাজ করা, ঝিলমিলি কাপড়ের অংশ যুক্ত করা, ফুলের ডিজাইন করা, হালকা পাতলা জাতীয় কাপড় ভাজ ভাজ আকারে যুক্ত করা ইত্যাদি বাহারি পোশাক যেগুলো খুব সহজেই একটা পুরুষের আকর্ষণের কারণ হতে পারে। পর্দার নামে সৌন্দর্য্য দেখানোর প্রতিযোগীতা চলে আসছে এর মধ্যে দিয়ে!
অথচ মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“পূর্বের জাহেলী যুগের মতো সৌন্দর্য্য প্রদর্শন করো না।“
-[সূরা আল-আহযাব, আয়াত-৩৩]
অনেকেই এত পাতলা কাপড়ের বোরখা পরেন যে তাদের অঙ্গগুলো দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে বোরখা টাইট-ফিট হবার কারণে তার শরীরের গঠন স্পষ্ট হয়ে পড়ে। এভাবে পর্দা তো হয়ই না বরং ফিতনা ও আজাবের দুয়ার খুলে যায়। আবার অনেক বোরখা পরেও মুখে মেক আপ করেন। নিকাব পরেও চোখে কাজল ব্যবহার করেন চোখের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য।
অথচ রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
“দুনিয়ায় অনেক সাজগোজ করে পোশাক পরিহিতা নারী আখিরাতে উলঙ্গ বলে বিবেচিত হবে।“
-[সহীহ বুখারী ১/৩৭৯,৫/২২৯৬]
রাসূল (সাঃ) আরও বলেন,
“দুই শ্রেণীর জাহান্নামী আমি দেখিনি (অর্থাৎ এরা আমার পর আসবে)। তাদের মধ্যে এক শ্রেণী হলো ঐ সকল নারী যারা পোশাক পরেও উলঙ্গ। এরা পথচ্যুত এবং অন্যকেও পথচ্যুত করবে। তাদের মাথার উপরে উটের কুজ বা চুটির মতো থাকবে (অর্থাৎ তারা চুল বা ওড়না ইত্যাদি উঁচু করে মাথায় রাখবে)। এরা জান্নাতে যাবে না, জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না। যদিও তা বহুদূর হতে পাওয়া যায়। তোমরা তাদেরকে অভিশাপ দেবে, কারণ তারা অভিশপ্ত।“
-[মুসলিম আস সহীহ ৩/১৬৮০,৪/২১৯২, হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৫/১৩৬-১৩৭, আলবানী, জিলবাব পৃঃ ১২৫]
অতএব নিজের পর্দার পোশাকের দিকে তাকানো উচিত। ভাবা উচিৎ, পর্দা করেও জাহান্নামী নারী নয়তো? কবরে কি আদৌ জান্নাতের সুঘ্রাণ পৌছাবে?
ইসলাম পর্দা পালনের যে বিধান আরোপ করেছে তা মূলত অশ্লীলতা ও ব্যভিচার নিরসনের লক্ষ্যে এবং সামাজিক অনিষ্টতা ও ফিৎনা-ফাসাদ থেকে বাঁচার নিমিত্তেই করেছে। নারীদের প্রতি কোনো প্রকার অবিচার কিংবা বৈষম্য সৃষ্টির জন্য করেনি।
বরং তাদের পবিত্রতা ও সতীত্ব রক্ষার্থেই তাদের উপর এ বিধানের পূর্ণ অনুসরণ অপরিহার্য করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।‘ (সূরা আহযাবঃ ৩৩)
আপনি একজন নারী। আপনারা অনেক মূল্যবান বলেই পর্দার মাধ্যমে নিজেদের হেফাজত করতে হয়। আপনারা ইসলামকে ভালোবাসেন বলে সেই পর্দার বিধান মানেন। অনেক কাঠফাটা রোদে, তপ্ত গরমে আপনারা কালো পোশাক গায়ে জড়িয়ে নিজেদেরকে জাহান্নাম হতে রক্ষা করেন। কিন্তু একটু ভুলের কারণে এত কষ্ট করেও যদি শেষ পর্যন্ত জাহান্নামে যেতে হয়, তবে কষ্টের কি মূল্য?
মানবসমাজকে পবিত্র ও পস্কিলতামুক্ত রাখতে পর্দা বিধানের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে বর্তমান সমাজের যুবক ও তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা ও নারীজাতির নিরাপত্তার জন্য পর্দা-বিধানের পূর্ণ অনুসরণ এখন সময়ের দাবি।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা আমাদের সবাইকে সঠিকটা বোঝার তৌফিক দান করুক। (আমিন)