পরিত্যক্ত পৃথিবীর গল্প

 

পরিত্যক্ত পৃথিবীর গল্প

লেখকঃ খালিদ হাসান (ঈমন)

বির মন খারাপ করে বসে আছে। আজ সে সব কিছু হারিয়েছে। এই দুনিয়াতে তার কেউ নেই আজ। মায়ের কবরে নিজের হাতে মাটি দিও আসলো সে। পৃথিবীতে আপন বলতে তার মা-ই ছিলো আপন । কিন্তু সেও আজ চলে গেলো তাকে একা ফেলে। সে ভাবছে মানুষ সবাই স্বার্থপর। জন্মের আগেই সে তার বাবা কে হারিয়েছে। তার মা নিজেও স্বার্থপরের মত চলে গেলো।

পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে সে। তাই সে একা বসে কাদতেছে।

হঠাৎ কোথা থেকে একটা আলোর রশ্মি পড়লো আবিরের মুখে সে তাকিয়ে দেখলো কোনো এক অপরুপ সুন্দরী তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে ভয়ে কিছু দূর পিছিয়ে গেলো।

মেয়েটি বলে উঠলো কেমন আছো আবির?

(আবির তখনও যেন  ঘোরের ভেতরে আছে কিন্তু তখনও তার সন্দেহ কাটেনি )

 

মেয়েটি আবারও তার দিকে করুণ সুরে তাকে বললো তোমার মা আজ তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে তাই না?

মেয়েটির এমন কথায় আবির চমকে উঠে। 

-আপনি কি করে জানেন? আর কে আপনি?

-আমি এঞ্জেল

-কোন এঞ্জেল? আর আমার বিষয়ে আপনি কিভাবে জানেন?

-আমি সব জানি। তুমি কি আমার বন্ধু হবে?

-আপনাকে চিনিনা জানিনা আর আমি কেনই বা আপনার ফ্রেন্ড হবো?

-কারণ আমিও তোমার মত অসহায়। আমারও কেউ নেই

-কেন আপনার বাবা মা?

-আমার কাহিনী শুনবে তুমি?

-জী বলেন

-আমার নাম গল্প এঞ্জেল আমি এসেছি পৃথিবী থেকে কয়েকশ মাইল দূরে জিঞ্জিরা রাজ্য থেকে।  জিঞ্জিরা শব্দটি আরবি জাজিরা (উপদ্বীপ) শব্দের বিকৃত রূপ। আর এখানেই বহুবছর ধরে আমাদের পরী এবং জিন রা বসবাস করে আসছে। সেখানেই একজনের নাম ছিলো আবদুল্লাহ নামের এক জীন। তার সাথে আমার পরিচয় গড়ে ওঠে। ধীরে ধীরে সেটা ভালোবাসায় রুপান্তর হয়।

সে ছিলো খুবই বিচক্ষণ একটা জীন। অন্য জীনেরা তাকে নিয়ে হিংসে করতো। 

কিন্তু আমাদের সমাজে একটা প্রথা ছিলো নিজেদের গোষ্ঠিতে কোনো জীন বা পরীদের বিয়ে হয় না। তাই আমরা আমাদের ভালোবাসা টা অনেক বছর লুকিয়ে রাখি। কিন্তু হঠাত করে আমাদের জীবনে নেমে আসে এক কালো আধারচ্ছন্ন দিন। 

এক বিকেলে আমি আমার অন্য পরী বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বেরিয়েছি। আমার চাচাজান আমাকে সেখান থেকে ধরে নিয়ে আসে। চোখে ছিলো তার আগুনের গোলার মত ক্রোধ। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমি দেখি আমার আব্দুল্লাহ কে ওরা বেধে রেখেছে। আমার আর বুঝতে বাকী নেই য আমরা যে স্বপ্নগুলো এতদিন ধরে বুনে এসেছিলাম সব শেষ

(এতক্ষণ ধরে সব শুনছিলো আবির। এবার সে নড়েচড়ে  উঠলো। সে একটু লক্ষ্য করে দেখলো মেয়েটার চোখে পানি। সে আবার আগ্রহের সহিত জিজ্ঞাসা করলো 

-তারপর কি হলো?

-তারপর??? তারপর সব শেষ

-মানে? কি হইছিলো আব্দুল্লাহর? কোথায় সে?

-সে আর নেই। আমারই চোখেরই সামনে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে অথচ যে আমি তাকে সারাজীবন পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম , তার সামনে থাকা সত্ত্বেও আমি কিছুই করতে পারলাম না। 

-সে তো বুঝলাম কিন্তু আপনি এখানে কি করে আসলেন? 

-তাকে মেরে ফেলার পর আমার আর সেখানে জায়গা হয়নি। ছুড়ে ফেলা হয় এই পৃথিবী তে। এখানে প্রায় ২০ বছর ধরে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছি

-কিন্তু আপনি আমার এখানে আসলেন কেন?

-কারণ আপনি খুব কষ্টে আছেন আর আমি এসব কষ্টের মর্ম বুঝি আর সব থেকে বড় সত্যি আপনি দেখতে আমার আবদুল্লাহর মত

-জানিনা কেন এসেছেন আপনি কিন্তু আমি আর কোনো মায়ায় যেতে চাইনা। সবাই আমাকে ছেড়ে চলে যায়

-আচ্ছা আমি যদি না যায়

-এটা দিয়ে কি বোঝাতে চান?

-আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই

-কিন্তু এটা কি করে সম্ভব ? আমি মানুষ আর আপনি পরি

-কিন্তু এখন তো আমি মানুষ । আমাকে যখন পৃথিবি তে পাঠানো হয় তখন আমার রুপবদলের শক্তি কেড়ে নেওয়া হয়। পৃথিবীতে আসার পর আমি সম্পূর্ণরুপে মানুষে রুপান্তর হয়ে যায়। অন্যান্য ক্ষমতা অক্ষত থাকলেও আমি আমার পরীর বেশে ফিরতে পারিনা

-কিন্তু আপনি আমার সাথে থাকবেন কি করে?

-আমি আপনার সাথে থাকছি না। আপনাকে নিয়ে যাচ্ছি আমার সাথে অন্য এক দুনিয়ায়

-কোথায়? 

-আপনি চিন্তা করবেন না সেখানে আমাদের মত অনেকেই আছে যারা এই পৃথিবী থেকে দুমড়ে মুচড়ে নিজেকে শেষ করে দিয়েছে তাদের পরিত্যক্ত দুনিয়ায় যারা এই পৃথিবীতেও ঠাই পায়নি। 

তারাই কেবল থাকে ওখানে

-মানে আত্মাদের দুনিয়ায়?

-এটাও তো আত্মাদের দুনিয়া। এখানে শুধু তারা দেহ নামক এক বিষেষ ধরনের পোশাক পরে থাকে। 

-তা অবশ্য ঠিক।

-হুম কিন্তু আরেকটা কথা আমাকে বিয়ের পর তুমি কিন্তু আর এই দুনিয়া তে আসতে পারবেনা, সারাজীবন বন্দী হয়ে যাবে পরিত্যক্ত দুনিয়ায়। 

-আমার এই দুনিয়ায় কেউ নেই। আচ্ছা ওই দুনিয়া তে কি আমি আমার মেয়ের আত্মা কে দেখতে পাবো?

-হয়তো খুজলে পাবেন। আত্মাদের দুনিয়াতেও সামাজিক শৃঙ্খলাবোধ রয়েছে আমাদের মতই।

-তাহলে চলুন আমার আর কোনো ক্ষোভ নেই। নেই কোনো কষ্ট আমি সব ফিরে পেতে চলেছি এটাই অনেক।

(এরপর দুজনে হাত ধরে মিশে চলেছে নতুন এক সূর্যদয়ের আলোর আশায়, অজানা এক রাজ্যর দেশে, অজানা এক পরিত্যক্ত পৃথিবীতে )

——-সমাপ্ত——

Leave a Comment